আমতলী প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার বায়বালা গ্রামে আধা কিলোমিটারের মধ্যে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তিনটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর তিন ফসলি জমি, জীব বৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ইটভাটার কারণে ফসলি জমির উর্বরতা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে তেমন ফসল হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের। ওই ইটভাটা বন্ধে রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক কেএম মাহফুজ আফ্রিদি গত ২৩ জুলাই বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু গত এক মাসেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন বলে অভিযোগ করেন তিনি। দ্রুত অবৈধ ওই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামে ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা বিবিসিকো নামের একটি ড্রাম চিমনি ইটভাটা স্থাপন করেন। এরপর ২০১৮ সালে বিবিসিকো ইটভাটার তিন’শ গজ দূরে ফাইভ স্টার নামের আরেকটি ড্রাম চিমনি ইটভাটা স্থাপন করেন সেতু তালুকদার। বর্তমানে ওই দুই ইটভাটার পাশাপাশি মোঃ জসিম গাজী আরেকটি ইটভাটা স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ওই ইটভাটার জন্য মাটি কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বর্ষার মৌসুম শেষ হলেই ওই ইটভাটার কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ফসলি জমি নষ্ট করে এ ইটভাটা তিনটি গড়ে উঠেছে। ওই ইটভাটা তিনটিতে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।
প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইটভাটা তিনটি গড়ে উঠেছে। আধা কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি ইটভাটা নির্মাণ করায় ওই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীব বৈচিত্র্য, প্রাণিসম্পদ, খামার,গ্রামীণ সড়ক ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে ওই গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে জানানোর পরেও তারা অজ্ঞাত কারণে দেখেও না দেখার ভান করেছে। এদিকে ইটভাটির মালিকরা বলেন, প্রশাসন, কৃষি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনকে ম্যানেজ করেই ইটভাটি স্থাপন করেছি। ঘনবসতি এলাকা, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় ওই গ্রামের ইটভাটিগুলো বন্ধে রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক কেএম মাহফুজ আফ্রিদি গত ২৩ জুলাই বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু গত এক মাসেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নতুন ইটভাটির পরিচালক মোঃ জসিম গাজী বলেন, ইটভাটি স্থাপনের জন্য মাটি কেটে স্তূপ করে রেখে দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু করবো। বিবিসিকো ইটভাটির মালিক মোঃ হান্নান মৃধা বলেন, আমি ইটভাটি জিকজ্যাক করছি। এখন আর কৃষি জমি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, রায়বালা এলাকার কোন ইটভাটি স্থাপনে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। কৃষি জমিতে ইটভাটি স্থাপন করলে একদিকে আবাদি জমি নষ্ট হবে, অন্যদিকে ইটভাটি এলাকার জমির ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হবে। বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আবদুল হালিম বলেন, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন জায়গায় ইটভাটি স্থাপন করতে পারবে না। আমতলীর রায়বালা গ্রামে কোন ইটভাটি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ওই ইটভাটিগুলো বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, সরকারী নিয়ম বহির্ভূত কোন ইটভাটা নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply