এইচ এম জাকির, ভোলা ॥ উদ্বোধনের ১০ বছরেরও শেষ হয়নি ভোলার লালমোহনে স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ। শুরুর দিকে নির্মিত আশিংক ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় তাও এখন পরিতাক্ত। অযতœ আর অবহেলায় বর্তমানে এটি গরু-ছাগলের চরন ভুমিতে পরিনত হয়েছে। প্রায় এক যুগের কাছাকাছি সময় হলেও স্টেডিয়ামটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় খেলোয়ার ও স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালের দিকে ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমোহন পৌরসভার সিমানা সংলগ্ন হাওলা গ্রামের প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর এ স্টেডিয়ামটির নির্মাণের নিন্ধান্ত নেয় স্থানীয় উপজেলা পরিষদ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল স্টেডিয়ামটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখায় ও জাতীয় খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে তার নামেই বীর বিক্রম হাফিজ উদ্দিন স্টেডিয়াম হিসেবে এর নামকরণ করা হয়। উদ্বোধনের পরপরই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পায় ১৫ লাখ টাকা। তা দিয়েই প্রাথমিক ভাবে স্টেডিয়াটির নির্মাণকাজও শুরু হয়। এরপর মাঠে মাটি ভরাটের জন্য আরও ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবুও অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণকাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের প্রবেশ মূখে নির্মিত আশিংক ভবন দীর্ঘ দিনের অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে পিরিত্যাক্ত অবস্থায়। মাঠটি জুড়ে গরু ছাগলের চারণ ভুমি থাকলেও মাঠের বড় একটি অংশই দখল করে রেখেছে একদিকে কিছু বেধে পরিবার, অন্যদিকে তৈরি হয়েছে ট্রাক ট্রলিসহ বিভিন্ন মালবাহি পরিবহনের ওয়ার্কসপ। মাঠ দখল করে ট্রাক ট্রলি সংস্কার করছে এমন প্রশ্নে এক ট্রলির চালক মোস্তফা মিয়া বলেন, বহু বছর যাবত এটি পড়ে আছে, এখানে কেউ খেলাদুলাও করছে না। তাই আমরা মাঝে মধ্যে গাড়ীগোড়া সংস্কারের জন্য মাঠটি ব্যবহার করছি। কথা হয় বেধে পরিবারের এক সদস্য জামালের সাথে। তিনি বলেন, আমারাতো আজ প্রায় সাত মাস হয়েছে এখানে এসেছি। গায়গাটি খালি পড়ে আছে বিদায় আমরা কোন ভাবে মাচা তৈরি করে বসবাস করছি। কেউ যদি আমাদেরকে চলে যেতে বলে তাহলে আমরা চলে যাবো।
এদিকে লালমোহনে একটি আধুনিক স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নিয়েও তা অসমাপ্ত রাখায় স্থানীয় খেলোয়ার ও ক্রীড়ামতি মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা ক্রীড়াসংস্থার সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম নবীন বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে স্টেডিয়ামটি তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হলেও আদৌ তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটি যে ভাবে নির্মান করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছিলো। তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে হলে এটি একটি আন্তজার্তিকমানের স্টেডিয়ামে পরিণত হতো। এখানে আন্তজার্তিক খেলার আয়োজন করাও সম্ভব হতো। দ্বিতল বিশিষ্ট এই স্টেডিয়াম ভবনে ভিআইপি লাউঞ্জ, প্রেস লাউঞ্জ, পেয়ার লাউঞ্জসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পরিকল্পনা ছিলো। এছাড়াও মাঠের চারদিকে আধুনিক গ্যালারি নির্মাণ ও এর বাইরের অংশে আধুনিক মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিলো। লালমোহনের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক পাবেল হাসান বলেন, এ উপজেলায় একটি ভালো খেলার মাঠ নেই। যাও একটি কলেজ মাঠ ছিলো, সেটিকে কেন্দ্র করে সজিব ওয়াজেদ ডিজিটাল পার্ক হওয়ায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে সেখানে ঠিক ভাবে খেলাদুলা করা যায় না। স্টেডিয়ামটি হলে এখানকার খেলোয়ারদের মাঝে কয়েক গুন বেড়ে যেতো উৎসাহ উদ্দিয়পানা। লালমোহনের সেরা ফুটবল খেলোয়ার মোঃ রাহা বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি, লালমোহনের কৃতি সন্তান মেজর হফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম একটা সময় বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়ার ছিলেন। তিনি এই অঞ্চল থেকেই খেলোয়ার হয়েছেন। কিন্তু আজ আমাদের মধ্যেও কিছুটা প্রতিভা থাকলেও আধুনিক একটি স্টেডিয়ামের অভাবে আমারা তা কাজে লাগাতে পারি না। আমি মনে করি দেশের প্রতিটি উপজেলাই ভালো খেলোয়ার সৃষ্টি হতে হলে সেখানে অবশ্য একটি আধুনিক স্টেডিয়ামের প্রয়োজন। এতে করে খেলোয়ারদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন বলেন, আমাদের ভোলা জেলায় আধুনিক কোন স্টেডিয়ামন নেই। অথচ এই জেলার বহু খেলোয়ার রয়েছে যারা এক সময় জাতীয় দলের খেলোয় ছিলেন। বিশেষ করে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, ফুটবল খেলোয়র টুটুল, গজনবী, গোল রক্ষক আমিনুল, সহ আরো অনেক খেলোয়ার এ জেলা থেকে সৃষ্টি হলেও আদ্যবদি এই জেলায় একটি আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মান করা হয়নি। সদর উপজেলায় একটি স্টেডিয়াম থাকলেও আন্তঃজেলা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগীতার সময় একটি স্টেডিয়ামে চাপ সামাল দিতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই জেলার একমাত্র স্টেডিয়ামটিকে আধুনিক স্টেডিয়ামে রূপান্তরীত করার পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্টেডিয়াম নির্মান করা হলেও এই জেলা থেকে প্রতি বছরই জাতীয় দলে খেলার মতো দু-একজন খেলোয়ার তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সামসুল আরীফ বলেন, স্টেডিয়ামটি পুঃনরজীবিত করতে আমরা উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলেছি। শীগ্রই তিনি ক্রীড়া মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্ধ এনে স্টেডিয়ামটিকে নতুন করে তৈরি করার জন্য পুনরায় উদ্যোগ নিবেন।
Leave a Reply