করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবার নীতিমালায় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সাথে ঋণ বিতরণের অগ্রগতি তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ ২৫টি ব্যাংকের সাথে বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের জন্য প্রথমে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ বিতরণের ধারে কাছেও যেতে না পারায় এ সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর করা হয়। অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই এ ঋণ বিতরণ করতে হবে। কিন্তু গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তা আড়াই হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেনি। এখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা আগামী দুই মাসের মধ্যে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। কিন্তু ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বর্তমান ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর জন্য এ বিপুল অঙ্কের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলো কেন ঋণ বিতরণ করতে পারছে না তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় উঠে আসে বিদ্যমান নীতিমালা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলেও কোনো গ্রাহককে কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।
বিদ্যমান নীতিমালায় বলা হয়, কোনো গ্রাহকের চলতি মূলধনের ঋণের স্থিতির ৩০ শতাংশ অথবা গ্রাহকের বিগত তিন বছরের আর্থিক বিবরণী বিবেচনায় গড় পরিচালন ব্যয়ের ৫০ শতাংশ এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ অর্থই হবে গ্রাহকের ঋণসীমা। যেমন, কোনো গ্রাহকের চলতি মূলধনের সীমা ছিল এক কোটি টাকা। তিনি সারা বছর লেনদেন শেষে তার স্থিতি থাকল ২০ লাখ টাকা। এর ৩০ শতাংশ হলো ৬ লাখ টাকা। আবার তিন বছরের পরিচালন ব্যয় ৬ লাখ টাকা হলে এর ৫০ শতাংশ হলো ৩ লাখ টাকা। বিদ্যমান নীতিমালায় এ দুইয়ের মধ্যে যেটি কম অর্থাৎ ৩ লাখ টাকা হলো গ্রাহকের ঋণসীমা। প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে একজন উদ্যোক্তাকে একটি ব্যাংক এ নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারবে। বিদ্যমান এ নীতিমালায় একজন গ্রাহককে এর চেয়ে বেশি ঋণ দেয়ার সুযোগ ছিল না। এর ফলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ব্যাংকের দৃষ্টিতে একজন ভালো গ্রাহক হলেও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এই গ্রাহককে বাড়তি ঋণ দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বত্র চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। গভর্নর ফজলে কবিরও দফায় দফায় বৈঠক করছেন ব্যাংকারদের সাথে। একই সাথে ঋণ বিতরণ কিভাবে বাড়ানো যায়, বিদ্যমান নীতিমালা ঋণ বিতরণের কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে কি না এবং কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিরসনেরও উদ্যোগ নিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের সীমায় এখন থেকে উদ্যোক্তার পরিচালন ব্যয় হিসেবে আনা হবে না। শুধু চলতি মূলধন ধরা হবে। একই সাথে উদ্যোক্তাদের যেন বেশি পরিমাণ অর্থ বিতরণ করা যায়, সেজন্য চলতি মূলধনের স্থিতির পরিবর্তে সীমা হিসাবায়ন করা হবে। আর চলতি মূলধনের সীমার ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংক। যেমন, কোনো গ্রাহকের ঋণসীমা এক কোটি টাকা থাকলে এখন একটি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করতে পারবে।
এ দিকে প্রণোদনার প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করণীয় নিয়ে আজ ২৫ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর সাথে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। আজ বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক সূত্র। যেসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ করতে পারছে না বা ঋণ বিতরণ করলেও খুব কম বিতরণ করেছে ওই সব ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হবে। পাশাপাশি কিভাবে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় সে বিষয়ে ব্যাংকারদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হবে। সভায় গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
Leave a Reply