কাজী সাঈদ ॥ নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পিয়াস রায়ের শেষকৃত্য হয়েছে বরিশালে। শ্রদ্ধা আর ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্য দিয়ে বরিশাল মহাশ্মাশানে গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে বরিশালের নতুবাজার সংলগ্ন শ্মাশানে নিহত পিয়াস রায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। ধর্মীয় রীতিনীতির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় চিতায় আগুন ধরিয়ে দেন।
শেষবারের মতো বাকরুদ্ধ অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানালো পিয়াস রায়ের স্কুল জীবনের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। শুক্রবার সকাল আটটায় ফ্রিজিং গাড়িতে করে পিয়াসের মরদেহ আনা হয় বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে। এর আগে রাত তিনটায় পিয়াসের মরদেহ নগরীর গফুর লেনের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকেই পিয়াসের মা-বাবাসহ স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। একমাত্র সন্তানের কফিন জাপটে ধরে বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন পিয়াসের মা স্কুল শিক্ষক পূর্ণা রানী রায়।
শোকাবহ সেই বাড়িতে ধর্মীয় আচার পালন শেষে সকাল পৌনে আটটায় জিলা স্কুল মাঠে গাড়িটি পৌঁছলে কফিন দেখেই কাঁদতে থাকেন শিক্ষক ও সহপাঠীরা। মরদেহবাহী গাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা কফিনটি নামিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যালয়ের প্যারেড প্রাউন্ডে রাখেন। পরে সেখানে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ জিয়াউল হকসহ পিয়াসের সহপাঠী ও শিক্ষকরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পিয়াস রায়ের মরদেহ দুপুর দেড়টায় বরিশাল নগরীর মহাশ্মাশানে নিয়ে অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
পিয়াসের স্কুল জীবনের সহপাঠী ইভান জানান, পিয়াসের সাথে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সাথে ছিলো মধুর সম্পর্ক। পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ক্ষেত্র ছিলো পিয়াসের দখলে। ২০১০ সালে পিয়াস বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলতার সহিত ভালো ফলাফল অর্জন করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পিয়াস সুন্দর আচার-ব্যবহারের অধিকারী ছিলো। তার এভাবে চলে যাওয়া কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। আমরা তার এ মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।
১২ দিন পর নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন পিয়াস রায়। তবে পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে করে নয়; কফিনবন্দি হয়ে থাকা পিয়াসের নিথর মরদেহ এসেছে। বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার আগে মা পূর্ণা রানী মিস্ত্রী লঞ্চঘাটে দিয়ে এসেছিলেন একমাত্র পুত্র সন্তান পিয়াস রায়কে। মা যার সাথে হেঁটে গিয়ে লঞ্চে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। সেই টগবগে যুবক ছেলেকে বাবা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নিয়ে এসেছেন কফিনে করে। রাত তিন টায় যখন গোটা বরিশাল শহরে পিনপতন নিস্তব্ধতা। ঠিক তখন পিয়াস রায়কে বহনকারী গাড়িটি সাইরেন বাতি জ্বালিয়ে প্রবেশ করে শহরে। গফুর লেনের বাড়ির সামনে লাশবাহী গাড়িটি পৌঁছামাত্র স্বজন ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। পিয়াসের একমাত্র ছোট বোনের জামাতা হিমাদ্রি সরকার শুস্ময় জানান, ঢাকা থেকে পিয়াস রায়ের মরদেহ বুঝে নেয়ার পর সহপাঠী ও শিক্ষকদের অনুরোধে রাত ১২টার দিকে পিয়াসের মরদেহ প্রথম নেয়া হয় গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে পিয়াস রায়কে শেষ বিদায় জানায় তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা। উল্লেখ্য, ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্তে অন্যান্যদের সাথে বরিশালের পিয়াস রায় মারা যায়। বরিশাল শহরের সুখেন্দু বিকাশ রায়ের সন্তান পিয়াস রায় এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ভ্রমনের নেশায় নেপালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলো।
Leave a Reply