তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তারই দুই নায়িকা- মৌসুমী ও শাবনূর
মৌসুমী
সালমানের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল ‘তুই’-এর। যখনই দেখা হতো, অনেক মজা করতাম আমরা। খুবই আবেগপ্রবণ ছেলে ছিল সে। একটা গল্প শোনাই- আমরা এফডিসিতে একটা ছবির শুটিং করছিলাম। সেদিন কোনো কারণে ওর মনে হলো, আজকে শুটিং করবে না। আমাকে এসে বলল, ‘দোস্ত আজকে শুটিং করব না। তুই শুটিং প্যাকআপের ব্যবস্থা কর।’ আমি বললাম, ‘আজকে আমাকে শুটিং করতে হবে। তা না হলে শিডিউল ওলটপালট হয়ে যাবে।’ ও আমাকে কিছুই বলল না। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, ওয়াশরুম থেকে সালমান বের হচ্ছে। ওর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। আমরা সবাই তখন দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। ও বলল, ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে হাত কেটে গেছে। পরে বাধ্য হয়েই শুটিং বাতিল করতে হলো। পরে জানলাম, সে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। ওর আবেগের কাছে আমাদের অনেকবার হারতে হয়েছে। আমার এ আবেগপ্রবণ বন্ধুটাকে খুবই মিস করি। চলচ্চিত্রে সালমানের অবদান কখনই ভোলা যাবে না। ও আমাদের চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমার এই বন্ধুটার শূন্যতা সব সময় মনে পড়ে।
শাবনূর
সালমানকে প্রথম দেখি এফডিসিতে। মৌসুমী আপুর সঙ্গে শুটিং করছিল। আসা-যাওয়ার মধ্যেই দেখা হতো। তবে কথা হতো না। তখন শুনেছি, চলচ্চিত্রে সালমান নামে নতুন একজন হিরো এসেছে। আনুষ্ঠানিক পরিচয় ‘তুমি আমার’ ছবিতে অভিনয় করার সময়। তখন কাজের কারণে বন্ধুত্ব হয়। আমাদের প্রথম ছবি মুক্তির পর সুপারহিট হয়। এর পর অনেক ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছি আমরা। সালমান থাকবে আমার স্মৃতিতে। তার কথা অনেক মনে হয়। সে যদি বেঁচে থাকত, তা হলে সে কী হতো- সেটা শুধু সে নিজেই জানে। আমি মনে করি, কলকাতার উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটিটা যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, আমাদের দুজনকেও সবাই সেভাবেই গ্রহণ করত। বাংলা চলচ্চিত্রের অবস্থাও এখনকার মতো হতো না। রুপালি পর্দায় একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমাদের নিয়ে প্রেমের গুজব থাকলেও সালমানকে আমি ভাই ছাড়া আর অন্য কোনো চোখে দেখতাম না। আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে তৈরি করেছি। তিল তিল করে গড়ে তুলেছি। কিছুসংখ্যক লোক গুজব ছড়িয়ে আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করেছে। সালমান অনেক বড় মনের মানুষ। বয়সে বড় সবাইকে সে যথেষ্ট সম্মান করত। কোনো অহঙ্কার তার মধ্যে ছিল না। অনেক বেশি ভালো ছিল। সহশিল্পীদের সবার প্রতি খুব আন্তরিক আর কাজপাগল একটা ছেলে ছিল। আমাদের দুজনের বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি তার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর। তার মৃত্যু সংবাদ যখন পাই, তখন আমি বাসায় ছিলাম। হঠাৎ করে কে যেন ফোন করে জানায়, সালমান মারা গেছে। আমি উল্টো ধমক দিয়ে বলি, কী বলে এসব! আমার ছোট বোন বাইরে গিয়ে সালমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়। আমি তখন পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাই। এর পর এফডিসিতে সালমানকে দেখতে যাই। তাকে যদি আবার ফিরে পেতাম তা হলে জানতে চাইতামÑ তুমি কেন মরে গেলে? তোমার কী কষ্ট ছিল? তোমার এতকিছু থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি মরে গেলে? তোমার তো কোনো কিছুরই অভাব ছিল না? এসব আমার খুব জানার ইচ্ছা। যদি কখনো সালমানের দেখা পাই, তা হলে আমি তাকে এ কথাগুলো জিজ্ঞেস করব।
রক্ত-মাংসের একজন মানুষ, যিনি হাওয়া হয়ে ঢুকে পড়তেন একেকটি চরিত্রের ভেতর। মাত্র ২৭টি ছবির প্রতিটিতে দর্শক এখনো তাকে মুগ্ধ হয়ে দেখেন, তিনি সালমান শাহ। অমর এই নায়কের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
Leave a Reply