নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি। অথচ নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদের মধ্যে সুসংগঠিত হতে পারেনি এ দুটি ইউনিট। এমনকি তাদের অধিনস্ত ইউনিট কমিটিগুলো পুনর্গঠন কার্যক্রমের রয়েছে ব্যর্থতা। এসব কিছুর পেছনে অদক্ষ নেতৃত্বকেই দায়ি করছেন তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ‘দীর্ঘ বছরের আদু ভাই-দাদুভাইদের কমিটি’র বিদায় জানিয়ে ২০১৮ সালের ৭ জুন ঘোষণা হয় বরিশাল জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সুপার ফাইভ কমিটি। এর মধ্যে জেলা কমিটিতে জেএম আমিনুল ইসলাম লিপনকে সভাপতি, রফিকুল ইসলাম জনিকে সাধারণ সম্পাদক, জাবের আবদুল্লাহ সাদীকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে মাহাবুবুর রহমান পিন্টু ও মশিউর রহমান মঞ্জুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দুই বছরের জন্য গঠিত এই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে চলতি বছরের গত ৭ জুন। বর্তমানে দুটি ইউনিটই মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় দিন পার করছে।
এদিকে ‘ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নিয়ে গঠিত এই কমিটি নিয়ে প্রত্যাশা ছিলো বিএনপি’র শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও। নিস্কৃয়ী স্বেচ্ছাসেবক দলকে একটি নতুন রূপে পরিচিতি পাবে এমনটিই প্রত্যাশা ছিলো সবার। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। পূর্বের মত করেই ব্যর্থতা নিয়ে মেয়াদ পার করেছে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘বিগত দুই বছরে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম শুধুমাত্র মিছিল, মিটিং আর ফটো সেশনেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে তেমন কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি তাদের। বরং বিরোধ আর অনিয়ম অভিযোগে জড়িয়ে পড়ে।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘তাদের অধীনে ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদের মধ্যে মাত্র ৯টি ওয়ার্ডের দিতে পেরেছে তারা। তাছাড়া মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতেই তাদের সময় লেগে গেছে এক বছরের বেশি। তবে মহানগরের থেকেও পিছিয়ে আছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। দুই বছরে তাদের সফলতা শুধু বাকেরগঞ্জ থানা ও পৌরসভা ইউনিট কমিটি গঠন। এর বাইরে আগৈলঝাড়া উপজেলা, গৌরনদী পৌরসভা এবং থানা, বানারীপাড়া থানা এবং উজিরপুর উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করা। এর পর পরই কমিটি গঠন সম্পর্কিত বিরোধ, পদ বাণিজ্যের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। এর পর পরই স্থগিত হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সকল কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। এর এক দিনের মাথায় নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির দায়ে স্থগিত করা হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম। এর ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে একেবারেই পিছিয়ে যান জেলার নেতারা। পরে অবশ্য কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের এক মাস পরে গত ৩১ আগষ্ট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রমে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তবে এ কমিটি পারবে না ইউনিট কমিটি গঠন করতে।
দলীয় কার্যক্রম প্রসঙ্গে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মাহাবুবুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘জেলার আগেই গত বছরের মার্চে আমাদের মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের আওতাধীন ৩০টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন কার্যক্রমও শুরু করেছিলাম। সে অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ৯টি ওয়ার্ডে কমিটি দিয়েছি। এরি মধ্যে কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করে। ফলে বাকি ওয়ার্ডের কমিটি দিতে পারিনি। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলকে সুসংগঠিত করতে আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি এখন রয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম সম্পর্কে বক্তব্য জানতে সভাপতি জে.এম আমিনুল ইসলাম লিপন এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদী বলেন, ‘ইউনিট কমিটি গঠন কার্যক্রম গ্রহণের পর পরই আমাদের জেলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এ কারণে পরবর্তীতে আর নতুন করে কোন ইউনিটের কমিটি দেয়া সম্ভব হয়নি।
এক প্রশ্নের উত্তরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা বলেন, ‘আমরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলকে সুসংগঠিত করতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। তবে আমাদের নিজেদের মধ্যে অনেক ভুল ছিলো। এ কারণে শেষ পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এখন যখন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে তখন কমিটি গঠনের আর কোন সুযোগ নেই। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের পর পরই নতুন কমিটিতে পদ পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুরু করেছেন লবিং-গ্রুপিং। স্থানীয় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দরাস্থ হতে শুরু করেছেন তারা।
অপরদিকে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে বিতর্কের পরে এই ইউনিটকে উত্তর এবং দক্ষিণে বিভক্তের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এমনকি বিরোধের পর পরই তারা উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে বিভক্ত করে কমিটি গঠনের জন্য পৃথক দুটি কমিটির সুপারিশ কেন্দ্রে জমাও দেন তারা। এর মধ্যে উত্তরের কমিটিতে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম সুজনকে সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম পান্নাকে সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে সাবেক ছাত্রনেতা খন্দকার আবুল হাসান লিমনকে সভাপতি এবং জাবের আবদুল্লাহ সাদীকে সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে এদের বাইরে নতুন কমিটিতে পদ পেতে রফিকুল ইসলাম জনি, আতাউর রহমান আউয়াল, এ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক, আজিজুর রহমান মামুন ভুইয়া, রবিউল আউয়াল শাহীন, মাজেদ সিকদার সুজন, নিজামুল ইসলাম নিজামসহ একাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এসব বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বরিশাল জেলা এবং মহানগর কমিটি নিয়ে আপাতত আমরা ভাবছি না। আগে কেন্দ্র গুছিয়ে তার পরেই বরিশালসহ সারা দেশের কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। তাছাড়া বরিশালে যেহেতু এখন পর্যন্ত কমিটি বহাল রয়েছে সেহেতু উত্তর-দক্ষিণ বিভক্তের বিষয়টি নিয়েও ভাবছি না। তবে বর্তমান কমিটি নতুন করে কোন ইউনিট কমিটির অনুমোদন দিতে পারবে না। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন পরবর্তী তাদের এ বিষয়ে নতুন করে নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply