ত্বরান্বিত সমৃদ্ধি এবং অন্তর্র্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এ দুটি মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রণীত হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির সুবিধাগুলো যেন সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছানো যায়- এ পরিকল্পনায় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ‘কাউকে পিছনে ফেলে নয়’- এ স্লোগান সামনে রেখে অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অঞ্চলকে চিহ্নিত করে লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ ৩০ জুন সমাপ্ত হয়েছে। তবে করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ ফের শুরু হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী চূড়ান্তের কাজ চলছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, ২ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে প্রাথমিক উত্তরণের ভিত্তি স্থাপন করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অঞ্চলকে চিহ্নিত করে লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম নেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২০-২০৪১ এবং সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসরণ করা হবে। দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ সংকটের গুরুত্ব এবং প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে প্রস্তুতকৃত মূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মূল্যায়নে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন একটি স্টাডি সম্পন্ন করছে; ওই স্টাডির ফলসমূহ অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হবে। স্টাডিতে অন্য বিষয়ের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস সংকটের ফলে দারিদ্র্য হ্রাস কার্যক্রম এবং প্রবৃদ্ধি কীরূপ প্রভাবিত হবে, তা বিশেষ গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করা হবে।
গত এক দশকের অর্থনৈতিক সাফল্যের ওপর ভর করে সরকার দারিদ্র্যমুক্ত
দেশ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়ন করে। রূপকল্প ২০৪১-কে নীতিমালা এবং কর্মসূচিসহ একটি উন্নয়ন কৌশলে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে পরবর্তী ‘দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুমোদিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিমূলে রয়েছে দুটি লক্ষ্য। এর একটি হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে বর্তমান মূল্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫শ ডলারেরও বেশি এবং সোনার বাংলায় দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের কোনো বিষয়।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, এ পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও সরকারের দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাশাপাশি রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মিয়ানমার আন্তরিক হবে বলে আশাবাদ জানানো হয়।
Leave a Reply