অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে এর পরিবর্তনের হার ৭.২৩ শতাংশ হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ১২.৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির ‘কোভিড-১৯ জিনোম সিকোয়েন্সিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রবিবার বিসিএসআইআরের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন সম্পর্কে জানানো হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এবং সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সভাপতিত্ব করেন বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ।
গবেষকরা জানান, করোনায় থাকা মোট ২৮টি প্রোটিনের একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে ভাইরাসটি বাহককে আক্রমণ করে। গবেষণার অংশ হিসেবে দেশের আট বিভাগ থেকে মোট ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গত ৭ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এসব ডাটা সংগ্রহ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনার স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে তা গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি-৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি
শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এ কারণেই দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি।
গবেষকেরা আরও বলেন, বিশ্বে সব মিলিয়ে ৬ ধরনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া নমুনায় তারা ২৪৩টি জিআর ক্লেড, ১৬টি জিএইচ ক্লেড, ৩টি জি ক্লেড এবং একটি ও ক্লেড করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। এ ছাড়া করোনা নমুনাগুলোর শতভাগ ক্ষেত্রে মোট ৪টি মিউটেশনে পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা গেছে। এসব পরিবর্তনই দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য মূলত দায়ী।
দেশে এ পর্যন্ত ৩২৫টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকরা ২৬৩টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা বের করেছেন। এই ২৬৩টি ভাইরাসের জিন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দেশের করোনা ভাইরাসগুলোর জিনোমিক পর্যায়ে ৭৩৭টি পয়েন্টে রূপান্তর (মিউটেশন) হয়েছে। এর মধ্যে অ্যামিনো এসিড পর্যায়ে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। এ ছাড়া স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিওক্লিটাইড রূপান্তরের মধ্যে ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিডে ঘটেছে প্রতিস্থাপন। যার মধ্যে ৫টি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
বিসিএসআইআর জানায়, এরইমধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান মর্ডানা, দ্য ইউনির্ভাসিটি ও অক্সফোর্ডসহ কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে কাজ করা ৫০টি প্রতিষ্ঠানে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে, যা বাংলাদেশের কোভিড-১৯ উপযোগী ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করবে এবং বিসিএসআইআর তার অংশীদার হওয়ার গৌরব অর্জন করবে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণ, রূপান্তরের হার, জিনগত বৈচিত্র্য, নন-সিনোনিমাস মিউটেশন এবং জিনোমিক ফাইলোজেনি পর্যবেক্ষণ। এছাড়া গবেষণার ফলকে কোভিড মহামারী রোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যবহার করা। ইতিমধ্যে এ গবেষণার ফলাফল প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি রিসার্চ পেপার শিগগিরই আন্তর্জাতিক জার্নালেও প্রকাশিত হবে।
বিশ্বব্যাপী করোনার সর্বোচ্চসংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা ৫টি প্রতিষ্ঠানের একটি বিসিএসআইআর। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জিনোমিক রিসার্চ ল্যাব বলেও গণ্য করা হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
Leave a Reply