পিরোজপুর প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের নাজিরপুরে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) স্বপ্না রানী মৃধার কমিশন বাণিজ্যের কারণে চলতি বছরের বোরো মৌসুমের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্ধারিত দালাল চক্রের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কারণে চলতি মৌসুমের শুরুতে ধান দিতে এসে ফিরে গেছেন অধিকাংশ কৃষক। তার স্বামী হিমাদ্রি শেখর ম-লের মাধ্যমে এ দালাল চক্র নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কার্ডধারী কৃষকরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি টন ধানের জন্য এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা এবং প্রতি টন চালের জন্য নেওয়া হয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এভাবে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তবে অভিযুক্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা স্বপ্না ও তার স্বামী হিমাদ্রি তাদের বিরুদ্ধে আনা কমিশন ও সিন্ডিকেট বাণিজ্যের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার স্বামী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে আমি এখানে থাকি। তাও সারা দিন বাইরে থাকি, শুধু রাতে আসি। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কেউ আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছে। অথচ আমার এক আত্মীয় কার্ডধারী হওয়ার পরও দুর্নাম এড়াতে তাকে ধান দিতে নিষেধ করেছি। ’
এদিকে, উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের চলিশা গ্রামের কৃষক ফারুক হাওলাদার জানান, তিনি চলতি মৌসুমে লটারির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কৃষক হিসেবে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে, গুদাম রক্ষকসহ সেখানে থাকা লোকজন ওই ধান ভেজা ও অন্য অজুহাত দেখিয়ে তা ফেরত দেন। একই অবস্থা অন্য কৃষকদেরও। এ ধরনের হয়রানি এড়াতে অনেক কৃষক ধান দিতে আসেননি। ফারুক অভিযোগ করেন, ওসিএলএসডির স্বামীর নেতৃত্বে স্থানীয় দেবাশ্রয় হালদার জনিসহ ৫/৬ জনের একটি দালাল চক্র চলতি বছরের এ ধান সরবরাহ করেন। উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ভীমকাঠী গ্রামের কৃষক মো. হাফিজুর রহমান জানান, তিনি চলতি মৌসুমে খাদ্যগুদামে ছয় টন ধান দিয়ে প্রতিটনের জন্য ওসিএলএসডিকে এক হাজার টাকা করে ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন। অপরদিকে, খাদ্যগুদামে চাল দেওয়ার জন্য অনুমোদিত একাধিক মিল মালিক জানান, প্রতি টন চালের জন্য দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মিল মালিক জানান, ওসিএলএসডি আমার ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ার পরও সাড়ে পাঁচ টন চালের জন্য ১১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন বোরো ধান ও ৯৬৬ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫২ মেট্রিক টন ধান ও ৩৫৪ মেট্রিক টন ৭১০ কেজি চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, গত আমন ধানের মৌসুমে ৭৮০ মেট্রিক টন ধান ও ১০৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। এসব ধান ও চাল থেকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরই তিনি এভাবে কমিশন বাণিজ্য করে আসছেন। ধান দেওয়া কৃষকদের অভিযোগ, ধান বহন ও বস্তাজাত করার জন্য প্রতি টন ধানের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ধান বা চাল বহনের জন্য সরকারি ভাবে টাকা বরাদ্দ রয়েছে। চলতি মৌসুমে সরকার বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা ৩০ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারণ করলেও পরে তা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করে।
Leave a Reply