মঠবাড়িয়া প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় পৌর শহরের কে এম লতীফ ইনস্টিটিউটশনের ব্রিজ সংলগ্ন মাঠবাড়িয়া- পাথরঘাটা -আঞ্চলিক মহাসড়ক ও এডিবির ৯ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মিত বহুতল মৎস্য ভবন স্থাপনের নামে পৌর মেয়র ও উপজেলা আঃলীগ সভাপতি রফিউদ্দিন ফেরদৌসের ভুমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা পরিপন্থী প্রভাব খাটিয়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমিতে জনস্বার্থ বিরোধী ১৬ টি পাকা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পিরোজপুর – মঠবাড়িয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ রুস্তম আলীর ভূমি মন্ত্রণালয়ে দেয়া ডিও পত্রের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে চরখালী পাথরঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে স্থাপিত এ অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে তদন্ত করেন তিনি। জানা গেছে, মঠবাড়িয়া পৌর শহরে নবনির্মিত মৎস্য ভবন স্থাপন করে ভবন সংলগ্ন আঞ্চলিক মহাসড়কের গাঁ ঘেসে অবৈধ দোকান ঘর স্থাপন করে বরাদ্দ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। মাননীয় সংসদ সদস্য ও বিষয়টি নিয়ে মঠবাড়িয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দারা ভুমি মন্ত্রী, ভুমি সচিব সহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগ করেন।
এ ছাড়াও বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ টুডে (টিবিটি বাংলা) সহ একাধিক জাতীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। অবৈধ স্থাপনাটি জনস্বার্থ বিরোধী হওয়ায় গত ১৭ জুলাই স্থানীয় সাংসদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি ডিওলেটার প্রেরণ করেন। যার স্মারক নং ২২৯। ডিও পত্রটির বিষয়ে তদন্ত করে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিতকরণের জন্য বলা হয়। স্থানীয়রা জানান, মঠবাড়িয়া পৌর শহরের ওপর দিয়ে চলমান আঞ্চলিক মহাসড়কটি অবৈধ স্থাপনায় হুমকির মুখে। পৌর মেয়র ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় সড়কটির পৌর শহরের অংশ দিয়ে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাত না থাকায় পথচারীরা বিপাকে পড়ছে। ঢাকাগামী পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায়ই যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে।
মঠবাড়িয়া কে.এম লতিফ ইনষ্টিটিউটের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ছুটির পর ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা সড়ক দুর্ঘটনারও শিকার হয়। অবৈধ স্থাপনা ও স্কুলের মধ্যবর্তী ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ হলে অবৈধ স্থাপনা রাস্তার মধ্যে চলে আসবে বলে মনে করছেন অনেকেই। তারপরেও কিভাবে এখানে মূল ভবন সংলগ্ন পকেট দোকান তৈরি করে সড়কটিকে ঝুকির মধ্যে ফেলা হয়েছে তা কারোই বোধগম্য নয়।
অবৈধ স্থাপনাটি মঠবাড়িয়া পৌর শহরের ৪ টি সড়কের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপন করায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একটি বাস গেলে আর কোন যানবাহন ক্রোস করার সুযোগ থাকেনা। দুটি বাস মুখোমুখি হলে ঘন্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
ক্ষমতাসী দলের দখল বাণিজ্য রমরমা হয়ে উঠেছে। খাস জমি দখলে মেতে উঠেছে ভুমিখেকো একটি চক্র। এদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না কেউ। এর আগেও ওই চক্রটি একাদিক সরকারি জমি দখল করে নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে আসলে অবৈধ স্থাপনা টিকিয়ে রাখার পক্ষে শক্তি প্রদর্শন করতে দেখা যায় একটি গ্রুপকে। প্রশাসনের উপস্থিতিতেই অনিয়মের পক্ষে শক্তি প্রদর্শন করায় আতঙ্কিত হয়ে মুখ খুলতে পারেননি সাধারণ জনগণ। তবে জনস্বার্থে উপজেলা আঃলীগ এর জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এমাদুল হক খান ও উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মজিবর রহমান পিরোজপুরের জেলা প্রশাসককে অবৈধ স্থাপনা দ্রুত অপসারণের জন্য জোর দাবি জানান । এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিককে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি জেলা প্রশাসক এর উপস্থিতিতে পৌর মেয়র ও উপজেলা আঃলীগ সভাপতি রফিউদ্দিন ফেরদৌস এর অবৈধ স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আঃলীগ জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি এমাদুল হক খান এর ওপর চড়াও হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আঃলীগ এর জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি এমাদুল হক খান জানান, ফুটপাত ও ড্রেনের জায়গা দখল করে দোকান স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ অনিয়ম ও বে-আইনী। জনস্বার্থে এ অনিয়মের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কোনভাবেই জননেত্রী, দেশরতœ সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে দেয়া হবে না। পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন গণমাধ্যম কে জানান, বিষয়টি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের এর আগে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মান করার বিষয়ে তার কার্যালয় দেয়া সাক্ষাৎকারে জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, ডিজাইনের বাহিরে কোন কিছু করা যাবে না। মঠবাড়িয়ার ইউএনও কে সড়কের পাশে অনুমোদনবিহীন অবৈধ পাকা স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply