খোন্দকার কাওছার হোসেন : কারাবন্ধি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পর্দার আড়ালে চলছে সমঝোতার চেষ্টা। এতে ভূমিকা রাখছেন খালেদা জিয়ার পরিবার। একটি প্রভাবশালী দেশের কুটনীতিকদের সহায়তায় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সমঝোতার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। তারা যে কোনো মূল্যে খালেদাকে কারামুক্ত করতে বদ্ধ পরিকর। তাদের প্রচেষ্ঠাতেই নির্ধারিত হচ্ছে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যত। সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এ পথে হাটছেন সমঝোতাকারীরা। তাদের দৃষ্টিতে জেলে দীর্ঘদিন থাকার বয়স এখন নেই খালেদা জিয়ার। জীবনে তিনি অনেক রাজনীতি করেছেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির সমঝোতার প্রথম প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা এ পথে হাটছেন বলে জানা গেছে। সমঝোতার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে জেলে বিএনপির আট নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সোয়া ঘন্টার বৈঠক করেন? সে বৈঠক ফলপ্রসু না হওয়ায় এবার মাঠে নেমেছেন তার পরিবার। পরিবারের সদস্যরা ইতোমধ্যে কয়েক দফা খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলে দেখা করেছেন। এরই অংশ হিসেবে হঠাৎ করেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান সিঁথি। দেশে ফিরেই তিনি জেলে দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। সেখানে শাশুরীর সঙ্গে তার কী আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে অবশ্য তিনি মুখ খুলেননি। সহসাই তিনি আবার দেখা করতে যাবেন এমন খবর রয়েছে। শাশুরীর শুলশানের বাসা ফিরোজায় তিনি অবস্থান করছেন তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন তার মামা শশুর শামিম ইসকান্দার পরিবার।
বিএনপি নেতাদের দিয়ে সমঝোতা করালে তা গোপন থাকে না এ অভিযোগ থেকে খালেদা জিয়ার পরিবার নিজেদের কাধে এ দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। এ কারণে পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে বিএনপির অধিকাংশ নেতাই তা জানেন না। কোন প্রক্রিয়ায় আগাচ্ছে সমঝোতা, কারা যুক্ত এ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে তা নিয়েও অন্ধকারে রয়েছে বিএনপি নেতারা। বিষয়টি এখন তাদের দখলে নেই। এ কারণে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা সাক্ষাত পান না খালেদার। অসুস্থতার অজুহাতে সময় দিয়েও জেলের পথে রওয়ানা হয়েও যাওয়া মির্জা ফখরুলকে ফেরত যেতে হয়েছে। বিএনপি নেতারা প্রথমদিকে বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও এখন বুঝতে পারছেন পর্দার আড়ালে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তাই এ নিয়ে তাদের সুর নরম। খালেদা জিয়ার পরিবার এই সমঝোতায় বিএনপির কোন নেতাকে যুক্ত করতে অনাগ্রহী। তবে এর সঙ্গে সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী কাজ করছেন যিনি ওই পরিবারের আত্মীয় বলে জানা গেছে। সমঝোতা হলে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রথমে লন্ডনে যেতে পারেন খালেদা জিয়া। সেখান থেকে তিনি সৌদি আরবেও যেতে পারেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ সময় অবস্থান করবেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি, তারেক রহমান বা তার পরিবারের কোন সদস্য অংশ নেবেন না। কিন্ত বিএনপি অংশ নেবে। খালেদা জিয়া এমনিতেই বৃদ্ধ এবং অসুস্থ। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাদের পাশ কাটিয়ে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মতে, এভাবে একটা মানুষ কষ্ট পেতে পারেন না। এ বয়সে তার নাতিনীদের সঙ্গে আরাম আয়েশে জীবন কাটানোর কথা সেখানে তিনি জেলে বসে তিল তিল করে মরছেন। পরিবার মনে করে, খালেদা জিয়া বিএনপির জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের জীবনের সব সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু তার দুঃসময়ে বিএনপি উল্লেখ করার মতো কিছুই করতে পারেনি। সমঝোতা নিয়ে খালেদা জিয়া পরিবারের এ গোপন মিশনকে ভালভাবে দেখছে না বিএনপির অনেক নেতা। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাদের বিশ্বাস, সমঝোতার মাধ্যমে অসম্মানজনকভাবে খালেদা জিয়া কারামুক্ত হওয়ার লোক নন। তিনি এটা মেনে নেবেন না। তার অতীত ভূমিকা অন্তত তাই বলে। তাদের মতে, খালেদা জিয়ার ভাই বোনরা রাজনীতি করেন না। তারা নির্জন কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে এমন পথে হাটতে পারেন। কিন্তু খালেদা জিয়াই শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না। পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, ম্যাডামের ভাই বোনেরা তার কষ্ট দেখছেন, একাকিত্ব দেখছেন, মুক্তির বিষয়টি দেখছেন। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎটি দেখছেন না। সমঝোতার মাধ্যমে মুক্ত হলে তিনি হয়তো কারাগার থেকে বের হবেন,কিন্তু এতদিনের অর্জিত রাজনৈতিক জীবনের মৃত্যু হবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হাত নেই। এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। আদালতেই নির্ধারিত হবে তিনি জামিন পাবেন কিনা। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি যদি প্যারোল চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করে দেখবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে চিকিৎসা না হলে মেডিকেল বোর্ড যদি প্রয়োজন মনে করেন তিনি বিদেশে গিয়েও চিকিৎসা করাতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিক্ষায় ৪ সদস্যের বিশেষ বোর্ড গঠন করেছে সরকার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মো: সামিউজ্জামান, মনসুর হাবিব, টিটু মিয়া ও সোহেলী রহমান দুপুর সোয়া একটায় কারাগারে গিয়ে একঘন্টা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলন ছাড়া এখন অন্য কিছু চিন্তা করছে না তার দল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো বিকল্প নেই, আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করব। তার আগে অন্য কোনো কিছু আমরা চিন্তা করছি না, করব না।
Leave a Reply