নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গভীর সাগরে গত এক সপ্তাহ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পরছে রুপালী ইলিশ। প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ নিয়ে শত শত ট্রলার আসছে বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনার মোকামে। ফলে সাগরের ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলো। বরিশাল নগরীর পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বের চেয়ে মোকামে পাইকারী দাম কমতে শুরু করেছে। এছাড়া ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়ে গেছে জেলে, ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সশ্লিষ্টদের। ব্যবসায়ীরা জানান, ইলিশ রপ্তানির সুবিধা থাকলে মোকামে আমদানি হওয়া ইলিশ সংরক্ষণে বেগ পেতে হতোনা। তাদের মতে, শুধু সাগরের ইলিশেই এখন চাহিদার ওপরে আমদানি হয়েছে। তারা আরও জানান, গতবছর এ সময়ে আটশ’ থেকে এক হাজার মণ ইলিশ মাছ এসেছে নগরীর পোর্টরোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। সেখানে গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ ইলিশ আসছে এ মোকামে। এরমধ্যে একদিনেই এ মোকামে ছয়শ’ মন ইলিশ এসেছে।
আর এ কারণেই মোকামগুলোতে সাগরের ইলিশের দরপতন হতে শুরু করলেও বরিশালের খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাব পরেনি। প্রতিদিন সাগর থেকে জেলেরা ট্রলারভর্তি করে ইলিশ মাছ নিয়ে বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ মোকামে ফেরার কারণে জেলেদের হাক ডাকে মুখর হয়ে উঠেছে এসব মোকামগুলো। সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পরায় জেলেদের পাশাপাশি হাসি ফুটেছে ট্রলার মালিক ও আড়ৎদারদের মুখেও। সাগর থেকে আসা প্রতিটি ফিশিংবোটের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার লাখ টাকা। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ ধরার ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে পারে ভিড়ছেন জেলেরা। মাছ ভর্তি ট্রলার পাড়ে ভেড়ার সাথে সাথে শুরু হয় জেলেদের হাঁক ডাক। তারপর চলে বিকিকিনি। ভোজন রসিকরাও ভোরে চলে আসেন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। খুচরা বাজারে ইলিশের দাম একটু বেশি হলেও পছন্দের মাছটি ক্রয় করে বাড়ি ফিরছেন শৌখিন ক্রেতারা। সূত্রমতে, সবেমাত্র রুপালি ইলিশের দেখা শুরু হলেও করোনার চাঁপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ এখনও ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেননি। পাইকারী মোকামে ইলিশের দাম আগের তুলনায় অনেকটা কম হলেও এখনও খুচরা বাজারে তার কোন প্রভাব পরেনি।
অথচ ইতোমধ্যে ইলিশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে শক্তিশালী একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র। তারা অতিমুনাফার লোভে ইলিশ রপ্তানির ফন্দি এটেছে। ইতোমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা নানা সেক্টরে লবিং ও তদবির শুরু করেছেন। তবে এই মুহুর্তে ইলিশ রপ্তানির কোনো প্রস্তাব দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সূত্রে আরও জানা গেছে, হঠাৎ ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পাইকারী বাজারে দরপতন হতে শুরু করলেও তীব্র বরফ ও জ্বালানি সংকটে পরেছেন আড়তদার ও জেলেরা। ইলিশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনের অর্ধেক বরফও পাওয়া যাচ্ছেনা। যাওবা পাওয়া যাচ্ছে তা পূর্বের প্রতি ক্যান বরফ ১২০ টাকা দামের স্থলে বর্তমানে ৩৫০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।
অপরদিকে অভ্যন্তরীণ নদীর ইলিশের আমদানি কম থাকায় সেগুলোর দাম এখনও কিছুটা বেশি। যদিও কয়েকদিন পরে নদীতেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে এবং এর ধারাবাহিকতা ডিমওয়ালা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য দফতরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ আনিছুর রহমান। বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে নগরীর পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এতো পরিমাণ ইলিশ আসছে, যে এখন রাখার জায়গা নেই। দিন যতো সামনে এগোচ্ছে ততো বেশি ইলিশ আসছে এ মোকামে। এখানে ইলিশ সংরক্ষণের জন্যও নেই কোন হিমাগার।
আড়তাদার নাসির উদ্দিন জানান, বুধবার দেড় কেজি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ ৩৫ হাজার টাকা, ১ কেজি ২শ’ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ৩০ হাজার টাকা, কেজি সাইজের প্রতি মণ ২৭ হাজার টাকা, রপ্তানিযোগ্য এলসি সাইজ (৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) ২০ হাজার টাকা, ভেলকা (৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম) সাইজ প্রতি মণ ১৪ হাজার টাকা এবং গোটলা সাইজের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার টাকা মণ দরে। এতো কম দামে পাইকারী বাজারে ইলিশ বিক্রি করা হলেও খুচরা বাজারে এরকোন প্রভাব পরেনি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা তানভির আহম্মেদ । এখনও খুচরা বাজারে কেজি সাইজের প্রতিকেজি ইলিশ নয়শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে গত জুলাই মাসে ইলিশ বেচাকেনার হিসেব অনুযায়ী বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের নদ-নদী ও সাগরে বিগত চার বছরের জুলাই মাসের তুলনায় চলতি বছরের গত জুলাই মাসে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ ধরা পরেছে।
সূত্রমতে, দেশে মোট ইলিশের ৬৬ শতাংশ আহরিত হয় বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও সংলগ্ন সাগর থেকে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালের ইলিশ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ পাওয়া গিয়েছিলো। ২০১৮ সাল যার পরিমাণ কিছুটা কম হয়। ২০১৯ সালের জুলাই মাসের চেয়ে এবার মৌসুমের প্রথম মাসেই (জুলাই) ৬ হাজার ২৭৯ টন বেশি ইলিশ ধরা পরেছে।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত জুলাই মাসে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ইলিশ পাওয়া গেছে ১৮ হাজার ৬৫ টন। ২০১৯ সালের জুলাইতে যার পরিমাণ ছিলো ১১ হাজার ৭৮৬ টন। ২০১৮ সালের জুলাইতে ১০ হাজার ৬০০ টন ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১৩ হাজার ৫৭৪ টন এবং ২০১৬ সালের জুলাইতে ১৬ হাজার ৭৭৫ টন ইলিশ আহরিত হয়েছিল। ওই দুইবছর দেশে ইলিশ উৎপাদনে রেকর্ড হলেও পূর্বের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে চলতি বছরের জুলাই মাসে ১৮ হাজার ৬৫ টন ইলিশ পাওয়া গেছে। বরিশালের খুচরা বাজারে ইলিশের আমদানি কম থাকার সত্যতা স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ঢাকার বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়, তার চেয়ে কম বরিশালের বাজারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে দক্ষিণাঞ্চলে মোকাম ছিল মাত্র তিনটি যথাক্রমে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড, বরগুনার পাথরঘাটা এবং পটুয়াখালীর আলিপুর-মহিপুর। বর্তমানে বিভিন্ন নদীর তীরে অঘোষিত ইলিশ মোকাম হওয়ায় সেখান থেকে ইলিশ সরাসরি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। যার প্রভাব পরছে বরিশালের বাজারে।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন গত কয়েক বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ইলিশ আহরিত হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগ থেকেই আহরিত হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৫ মেট্রিক টন।
এর আগের অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে আহরিত মোট ইলিশের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন। যারমধ্যে বরিশাল থেকে আহরিত হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। যা দেশে মোট উৎপাদনের প্রায় ৬৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালেও প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পায়। চলতি অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। যা মোট উৎপাদনের ৬৬ শতাংশ।
এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, সামনে আরও প্রায় দুই মাস ইলিশ ধরার মৌসুম রয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সাগরে সৃষ্ট অতিজোয়ার সৃষ্টি হলে বেশি পরিমাণ ইলিশ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রবেশ করবে। তখন নদীতেও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরবে। ইলিশের মোকামে বরফ ও জ্বালানি সংকট ॥ গভীর সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরায় প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ নিয়ে শত শত ট্রলার আসছে বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনার মোকামে। হঠাৎ ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দরপতনের পাশাপাশি তীব্র বরফ ও জ্বালানি সংকটে পরেছেন আড়তদার ও জেলেরা।
ইলিশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনের অর্ধেক বরফও পাওয়া যাচ্ছেনা। পূর্বের প্রতি ক্যান ১২০ টাকা দামের বরফ বর্তমানে ৩৫০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ডিজেলের সরবরাহ কম থাকায় সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলো মোকামে মাছ রেখে ডিজেল সংকটের কারণে পুনরায় ইলিশ শিকারের জন্য সাগরে যেতে পারছে না। পটুয়াখালী, মহিপুর এবং বরগুনার পাথরঘাটায় তীব্র ডিজেল সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। পাথরঘাটার জ্বালানি ব্যবসায়ী এনামুল হোসেন জানান, সেখানে ডিজেল নেই। তাই শতাধিক ট্রলার সাগরে যেতে পারছেনা। বরিশাল ইলিশ মোকামের আড়তদার জহির সিকদার বলেন, ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার বরিশালে তীব্র বরফ সংকট শুরু হয়েছে। তাই দামও বেড়েছে। এখানে প্রতিদিন ৭ হাজার ক্যান বরফের প্রয়োজন। কিন্ত তার অর্ধেকও এখানে উৎপাদন হয়না। তাই খুলনা থেকে বেশি দামে তাদের বরফ আনতে হচ্ছে। ফিশিংবোটের ওপর নির্ভর করে দাম ॥ মাছ ধরার নৌকা বা ফিশিংবোটের আমদানির ওপর নির্ভর করেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে ইলিশের দাম কমছে ও বাড়ছে। যেদিন ৪০ থেকে ৫০টি বোট ইলিশের মোকামে আসে, সেদিন দাম কমে। আর যেদিন ১৫ থেকে ২০টি বোট ঘাটে ভেড়ে সেদিন দাম বাড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে ইলিশবাহী ফিশিংবোট বেশি আসায় ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কমেছে বলে জানিয়েছেন পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে কর্মরত শ্রমিকরা। তারা আরও জানান, ইলিশবাহী ফিশিংবোট থেকে ইলিশ তুলে এনে ফেলা হচ্ছে প্রতিটি আড়তের সামনে। আড়ত থেকে তা বরিশাল জেলার খুচরা বাজার থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। পোর্ট রোডের আড়তদার জহির সিকদার বলেন, ইলিশ নিধনে সরকারের সময়োপযোগি কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে মৌসুমে সাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরছে। তিনি আরও বলেন, ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি করতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো মাঠপর্যায়ে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে আগামীতে ইলিশের প্রজনন আরও বৃদ্ধি পাবে। গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসা ট্রলারের মাঝি মকবুল হোসেন বলেন, সাগরে এখনও প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ আছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ৬৫ দিন ইলিশ আহরনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগে ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরেছে। তাই ভারতের সাথে মিল রেখে একসাথে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে আমরা আরও বেশি মাছ ধরতে পারবো। বর্তমানে নদীর রুপালি ইলিশ ধরা না পরার কারণ হিসেবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ডিম পাড়ার সময় ইলিশ নদীতে প্রবেশ করে। এখনও সেই সময় হয়নি। সময় হলেই ইলিশ নদীতে প্রবেশ করবে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ইলিশ রক্ষায় সরকারের যেসব কার্যক্রম চালু রয়েছে, তা মাঠপর্যায়ে কঠোরভাবে পালন করায় এখন ইলিশের প্রজনন প্রতিবছরই বাড়ছে। এর সুফল হিসেবে নগরীর পোর্ট রোডসহ অন্যান্য মোকামগুলোতে ইলিশে সয়লাব হয়েছে। অতি মুনাফালোভিদের ষড়যন্ত্র ॥ ইলিশ বিক্রেতা একাধিক ক্ষুদ্র ব্যসায়ীররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে কতিপয় প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট অবৈধপন্থায় পার্শ্ববর্তী দেশে ইলিশ পাচার করে আসছে। এখন তারা অতি মুনাফারলোভে সরকারের কাছে ইলিশ বিদেশে পাঠানোর বৈধতা চায়। এজন্য রপ্তানি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা বিভিন্নস্থানে লবিংও শুরু করেছেন।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, ইলিশ শুধু ধরা শুরু হয়েছে। এখনও খুচরা বাজারে যে দর চলছে, তা সাধারণ মানুষের কেনার সামর্থ্যের মধ্যে পৌঁছায়নি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেটে ইলিশ জনগণের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও ইলিশের স্বাদ নিতে পারেননি, সেখানে কী করে রপ্তানির প্রশ্ন আসে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেন, দেশের চাহিদা মিটানোর পর উদ্বৃত্ত থাকলে ইলিশ রপ্তানির কথা ভাবতে হবে। কিন্তু বহুদিন ইলিশ ধরা বন্ধের পর এখনই যদি রপ্তানি করা হয়, তবে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবেন। মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, ইলিশ রপ্তানি সরকারের নীতি নির্ধারকদের ব্যাপার। তবে তড়িঘড়ি করে এটি করা যাবেনা। তিনি আরও বলেন, সরকার সারাবছর ইলিশ পাওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। খুচরা বাজারে ইলিশের দাম আরও সহনীয় হতে হবে। তখন হয়তো জনগনের চাহিদা মিটিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর ইলিশ রপ্তানির প্রস্তাব করতে পারে।
Leave a Reply