বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বরিশালে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলা এবং করোনাকালে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ইয়ুথদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বরিশাল নগরীর সেলিব্রেশন পয়েন্ট হলরুমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ইয়ুথ লিডারদের নিয়ে দিনব্যাপী ওই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বরিশাল বিভাগীয় শাখার যুগ্ম-সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সম্পাদক সাংবাদিক আরিফ আহমেদ মুন্না।
গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স ও প্লান ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মোজাম্মেল হক, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার-বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলের প্রতিনিধি সোহানুর রহমান, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলা সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও বাবুগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী আল-আমিন শেখ। সোমবার দিনভর অনুষ্ঠিত ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার ৩০ জন ইয়ুথ লিডার অংশগ্রহণ করেন। এর আগের দু’দিনেও একই ভেন্যুতে বিভিন্ন কমিউনিটির ইয়ুথ লিডারদের নিয়ে একই বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বরিশাল বিভাগীয় শাখার যুগ্ম-সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সম্পাদক সাংবাদিক আরিফ আহমেদ মুন্না বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অব্যাহত থাকলেও জনমনে করোনাভীতি ও সচেতনতার অভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। বেশিরভাগ মানুষই নূন্যতম মাস্ক ব্যবহার করছেন না। যারা ব্যবহার করছেন তারাও বেশিরভাগ সময় মাস্ক খুলে পকেটে কিংবা গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন। মাস্কের যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে সবার সচেতন হতে হবে এবং স্বেচ্ছায় নিজে দায়িত্ব নিয়ে অন্যদের সচেতন করতে হবে। একদা রাস্তায় নেমে সড়কের ট্রাফিক সিস্টেম রাতারাতি ঠিক করে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। একমাত্র ইয়ুথরা দায়িত্ব নিলেই দেশের সকল নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব।’
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মোজাম্মেল হক বলেন, ‘করোনা মহামারি সময়কালীন দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনার সুযোগ নিচ্ছে নির্যাতনকারীরা। করোনায় বাল্যবিয়ের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধিগুলো প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশের বাবুগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী আল-আমিন শেখ বলেন, ‘অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গোপন রাখা হচ্ছে বাল্যবিয়ের খবর। এমনকি পাত্রী অপ্রাপ্তবয়স্কা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি ছাড়াই হুজুর ডেকে অথবা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিড দিয়ে পড়ানো হচ্ছে বাল্যবিবাহ। তাছাড়া অনেক জায়গায় গ্রাম্য সালিশ বিচারের নামে ধর্ষণ কিংবা নির্যাতনের শিকার নারীদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্যই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।’
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইয়ুথ লিডার ও করোনা স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রলীগ নেতা আবিদ আল-সাকিব বলেন, ‘আমার শ্রদ্ধেয় নেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ভাইয়ের নির্দেশে করোনার শুরু থেকেই একজন করোনাযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বাবুগঞ্জ উপজেলার ৪ জন ব্যক্তিকে নিজে দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সহায়তায় দাফন করেছি। অথচ মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা লাশের ধারেকাছেও আসেনি। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে এমনকি তারা আমাদের সামান্যতম সহায়তাও করেনি। তবুও দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজ করেছি। এভাবে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে একটু ঝুঁকি ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে সত্যিকারের সোনার বাংলা বিনির্মাণ সম্ভব।’
Leave a Reply