যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারিতে রেঁস্তোরার ভেতরে খরিদ্দারদের বসে খাওয়া নিষিদ্ধের পর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে রেঁস্তোরা ব্যবসা। গত ৭ মাস ধরে চলছে এ অচলাবস্থা। ফলে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫৫ টি রেঁস্তোরার ১ কোটি ৫০ লাখ ১ হাজার কর্মচারি প্রায় বেকার হয়ে পড়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে রেঁস্তোরার ভেতরে খরিদ্দারদের বসে খাওয়া নতুন ঘোষণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে এসব ব্যবসায়ী ও কর্মাচারিদের মাঝে। খরিদ্দারদের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হচ্ছে এসব রেঁস্তোরা। তবে রেঁস্তোরা কর্তৃপক্ষ তাদের রেঁস্তোরায় ধারণ ক্ষমতার ২৫ শতাংশ খরিদ্দারকে প্রতি দফায় ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবেন।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো গত বুধবার এক ঘোষণায় রেঁস্তোরা চালুর এ অনুমতি দিয়েছেন। ঘোষণায় বলা হয়, রেঁস্তোরায় খরিদ্দারদের প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তা প্রত্যাহার করা হবে। মহামারি থেকে মুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনে আর এক দফা পদক্ষেপ হিসাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
২৫ শতাংশ খরিদ্দারদের রেঁস্তোরার ভেতরে বসে খাওয়া-দাওয়ার এই অনুমতিকে করোনা ভাইরাস থেকে নিউইয়র্ক সিটির মুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত পর্যটনের এই নগরীতে পর্যটকদের এবং নাগরিক সাধারণকে এই সবুজ সংকেত দিচ্ছে যে, এই শহর করোনামুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থার দিকে ফিরে যাচ্ছে।
তবে খরিদ্দারদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও অনেক রেঁস্তোরা তাদের দুরবস্থা থেকে সহজে মুক্ত হতে পারবে বলে মনে হয় না। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদের সঙ্গে মেলামেশায় বহু আমেরিকানের অনীহা এবং বিশেষ করে আসন্ন শীত মওসুমে রেঁস্তোরায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আবহাওয়াগত সীমাবদ্ধতা অনেকের জন্যই ব্যবসা পরিচালনার প্রতিকূল হয়ে দাঁড়াবে।
রেঁস্তোরার ভেতরে খাওয়া-দাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা গভর্নর কুমো এবং মেয়র ব্লাজিও তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাতিল করে দিয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক স্টেটে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এখন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সংক্রমণের হার এক শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে গভর্নর অন্য আরও কিছু পদক্ষেপের মতো রেস্টুরেন্ট ব্যবসার হতাশা ও লোকসান দূর করার জন্য এগুলোকে খরিদ্দারদের জন্য খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গভর্নরের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী রেঁস্তোরাগুলোর ভেতরের টেবিলগুলো সরিয়ে শুধু ২৫ শতাংশ টেবিল রাখা যাবে। গত জুন থেকে রেঁস্তোরাগুলোকে যে বাইরের সেবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল শীতে সে সার্ভিস অব্যাহত রাখা যাবে না। এই অবস্থায় রেঁস্তোরা শিল্পকে রক্ষার স্বার্থে ভেতরের সেবা প্রয়োজনীয়তার বিষয় পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। রেঁস্তোরা খুলে দেওয়ার পর করোনা সংক্রমণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। সিটির স্কুলগুলো যখন আবার শুরু হচ্ছে তার পরপরই রেঁস্তোরাগুলো খোলা হচ্ছে।
অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, সিটির বাইরে যেসব স্থানে রেঁস্তোরা ও বার চালু হয়েছে সেসব স্থান থেকে ১০ শতাংশ সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, রেঁস্তোরা কেবলমাত্র একজন মালিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নয়, একটি রেঁস্তোরা মানে তার রান্নাঘর এবং অন্যান্য সেবার কর্মচারিদের কর্মক্ষেত্র। রেঁস্তোরাগুলো রোগ সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। আবার রেঁস্তোরা খুলে না দিলে তারা বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়বে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫৫ টি রেঁস্তোরা রয়েছে। এসব রেঁস্তোরায় প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ১ হাজার কর্মচারি প্রায় বেকার হয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কের রেঁস্তোরা মালিকরা তাদের ব্যবসার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি গভর্নর ও মেয়রের বিরুদ্ধে ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সিটির ১৫ হাজার রেঁস্তোরা মালিকের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
Leave a Reply