ধর্ষণের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও সাত বছর কারাদণ্ড দেখিয়ে জাল নথি দাখিল করায় ঝিনাইদহ কারাগারের দুই রক্ষীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হযেছে তারা হলেন- ঝিনাইদহ কারাগারের রক্ষী কনস্টেবল বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল খায়রুল আলম, তদবিরকারক চাঁন্দ আলী বিশ্বাস (পিতা মৃত বজলু বিশ্বাস, গ্রাম উত্তরপাড়া, ঝিনাইদহ) এবং ওকালতনামা দেওয়া কাদের আলী (পিতা ইয়াকুব আলী)। একইসঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানকে মামলার তদন্তে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও মামলার তদন্তে যদি অন্য কারো সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় তবে তাকেও আসামি করা যাবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে জাল নথির ভিত্তিতে দেওয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বরের আদেশ প্রত্যাহার করেছেন।
মামলার এক আসামি কবির বিশ্বাসের করা আপিল ও জামিন আবেদনের সঙ্গে ওই রায়ের অনুলিপিতে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় এ আদেশ দেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামিপক্ষে আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমান আদালতে লিখিত আবেদন দিয়ে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
জানা যায়, মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে কবির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর মামলা করেন বেলায়েত হোসেন। এ মামলার বিচার শেষে ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৮ জুলাই রায় দেন। রায়ে একমাত্র আসামি কবির বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
এ মামলায় একাধিকবার জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন কবির বিশ্বাস। সর্বশেষ হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ও ৩০ মে তার জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন। এ অবস্থায় কারাবন্দী কবির বিশ্বাসের পক্ষে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নতুন করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল করেন। এই আপিলের সঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ের যে কপি দাখিল করা হয় তাতে দেখা যায়, ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আবু আহসান হাবীব ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এক রায়ে কবির বিশ্বাসকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং আরো তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
রায়ে বলা হয়েছে, কবির বিশ্বাসের বয়স ৬৫ বছর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বয়স বিবেচনায় তাকে সাজা কমিয়ে ৭ বছর দেওয়া হলো। এই আপিলের পর আদালত গত ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল গ্রহণ করেন। তবে আসামির সাজা কেন বাড়ানো হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণের পরও কেন সাজা কম দেওয়া হয়েছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বিচারক আবু আহসান হাবীবকে নির্দেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আদেশের সময় আদালতের প্রশ্ন ছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ প্রমানের পর আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা না দিয়ে সাজা কম দেয়ার সুযোগ আছে কি না। জবাবে বলেছিলাম, সে সুযোগ নেই। আইনে অভিযোগ প্রমানিত হলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে খালাস দিতে হবে। এর বাইরে কিছু করার নেই বিচারকের।
পরবর্তীতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ওই মামলার সব নথি জোগাড় করে জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এ অবস্থায় আদালত আজ সব নথি দেখে আদেশ দেন।
Leave a Reply