নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের গ্রামীণ জনপদের সিংহভাগ পরিবারেরই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। শতকরা ৩৭ ভাগ পরিবারের সেই সুযোগ রয়েছে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তা রয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ পরিবারের। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগে সবচেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রংপুর বিভাগ। অনলাইন দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে বরিশাল বিভাগ এবং সবচেয়ে পিছিয়ে সিলেট বিভাগ। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। এতে অংশ নেন বিআইজিডির সিনিয়র অ্যাডভাইজার মুহাম্মদ মুশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, রিসার্চ ফর পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (আরপিজি) বিভাগের প্রধান মেহনাজ রাব্বানী এবং অ্যাসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ হাজার ৫০০ পরিবারের ওপর চালানো এই গবেষণায় দেখা যায়- বয়স, পরিবারের আকার, আয়, শিক্ষা, পেশা, লিঙ্গ, বসবাসের স্থান ইত্যাদির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে ইন্টারনেট প্রাপ্তি, ব্যবহার ও অনলাইন দক্ষতার ক্ষেত্রে। গবেষণার তথ্য মতে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা অন্যান্য বয়সের ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের দক্ষতাও বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, যাদের মাসিক আয় ৩০,০০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি, তারা সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট সুবিধাপ্রাপ্ত (৭৪%)। যারা ৩০,০০০ টাকা বা এর চেয়ে কম উপার্জন করে তাদের উভয়ের ক্ষেত্রেই অনলাইন দক্ষতা সমান (৩৫%)। তাদের আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অনলাইন দক্ষতা ৪১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা যায়, যাদের মাসিক আয় ২০,০০০ টাকার বেশি, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের কোনো ধরনের আয় ব্যবধান নেই। অর্থাৎ, গ্রামীণ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহারের জন্য ২০,০০০ টাকার বেশি উপার্জন করা প্রয়োজন। গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, কৃষি খাতে কর্মরতদের ইন্টারনেট প্রাপ্যতা সবচেয়ে কম (১৭%) এবং শিক্ষার্থীদের প্রাপ্যতা সবচেয়ে বেশি (৭০%)। যারা বেকার বা অকৃষি খাতে কর্মরত তাদের তুলনায়ও শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট দক্ষতায় এগিয়ে (৪৬%); আর কৃষিতে যুক্তদের দক্ষতা সবচেয়ে কম (২৬%)। ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে এবং বেকাররা সবচেয়ে পিছিয়ে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ও দক্ষতার দিক থেকে নারীদের তুলনায় পুরুষরা এগিয়ে আছেন। বিভাগীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগের দিক চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। ঢাকা ও খুলনা রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রংপুর বিভাগ। আর অনলাইন দক্ষতার ক্ষেত্রে দেখা যায়- চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর সঙ্গে রংপুরের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অনলাইন দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে বরিশাল। তারপরই ময়মনসিংহ। ইন্টারনেট ব্যবহারে খুলনার অবস্থান বেশ ভালো। অনলাইন দক্ষতায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট। প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. সিদ্দিকী বলেন, গবেষণায় যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা ডিজিটাল বৈষম্য বিদ্যমান আছে, এটাই তুলে ধরছে। তিনি বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি সুবিধা প্রণয়ন ও অনুশীলন, ইন্টারনেট সংশ্নিষ্ট অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং লৈঙ্গিক মাত্রার দিকে লক্ষ্য রাখলে ‘ডিজিটাল বৈষম্য’ দূর করা সম্ভব। বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, এই গবেষণা দেখা যায়, প্রাপ্তি স্বল্পতা ও অল্প দক্ষতা গ্রামীণ বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকে সীমিত করে দিচ্ছে। অ্যাসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেট একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যদি ঠিকমতো এটিকে ব্যবহার করা না যায়, তবে বাংলাদেশে বিদ্যমান যে কোনো বৈষম্যকে এটি আরও বড় করে তুলতে পারে।
Leave a Reply