যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে তরুণ ভোটারদের ওপর সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ তরুণ ভোটার ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে করে ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন কিছুটা খোশ মেজাজে আছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্পও এগিয়ে আছেন। যেমন শ্বেতাঙ্গ তরুণরা ট্রাম্পকেই পছন্দ করেন। এ ছাড়া হিস্পানিক তরুণদের মধ্যেও ট্রাম্পের সূচক ওপরের দিকে উঠছে। তবে গড় হিসেবে বাইডেন এগিয়ে আছেন।
কোনো দেশে নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে- বয়স্করা যেভাবে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থক হয়ে থাকেন, তরুণরা তা হন না। তারা বরং রাজনৈতিক নেতাদের কাজের প্রতি, প্রতিশ্রুতির প্রতি নজর রাখেন। এ ছাড়া সিদ্ধান্তহীন ভোটার বলতে যা বোঝায় তার অধিকাংশই তরুণ। আর এ কারণেই তরুণ ভোটাররা যেদিকে সমর্থন দেন ভোটের পাল্লাও সেদিকে হেলে পড়ে।
৩০ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যে পরিচালিত ফোর্বসের জরিপে দেখা গেছে- জো বাইডেনকে পছন্দ করেন ৫৭ শতাংশ তরুণ ভোটার। কিন্তু এই সূচকটি গত জুন মাসের তুলনায় সম্প্রতি কিছু নিচে নেমে এসেছে। জুন মাসে জরিপে অংশ নেওয়া ৬০ শতাংশ তরুণ ভোটারের পছন্দের নাম ছিল বাইডেন। অর্থাৎ চলতি মাসে বাইডেন ৩ পয়েন্ট খুইয়েছেন। অন্যদিকে জুন মাসে ৩১ শতাংশ তরুণ ট্রাম্পকে পছন্দ করলেও চলতি মাসে সেটি ৩৫ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ জরিপের এ সূচকটি ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কিছুটা ঊর্ধ্বগামী।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, মে মাসে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার পর তরুণ কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বাইডেন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কৃষ্ণাঙ্গ তরুণদের ৭০ শতাংশ বাইডেনের পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের পক্ষে মত দিয়েছেন ২০ শতাংশ তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ। অন্যদিকে হিস্পানিক তরুণদের মধ্যে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে- সেটি ৬৬ শতাংশ থেকে নেমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। আর হিস্পানিকদের মধ্যে ট্রামের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে সব কিছুর পরও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো তরুণদের কাছে পছন্দের প্রার্থী হয়ে উঠতে পারছেন না বাইডেন। ২০০৮ সালে ৬৬ শতাংশ তরুণ ভোটার ওবামাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এটি ছিল ওই বছরের বুথ ফেরত জরিপের ফল। এর পর ২০১২ সালে যখন ওবামা পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই সময়ও ৬০ শতাংশ তরুণ ওবামার সমর্থক ছিলেন। তবে হিলারি ক্লিনটনের বেলায় তরুণদের সমর্থন নেমে গিয়েছিল ৫৫ শতাংশে।
এদিকে চলতি মাসে শ্বেতাঙ্গ তরুণদের মধ্যে জরিপে দেখা গেছে, দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব একটা বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে আর বাইডেনের পক্ষে ৫০ শতাংশ। আর বাকিরা মতামত দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন বা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। কিন্তু খ্রিস্টান শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ট্রাম্প বাইডেনের থেকে ৯ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। অথচ তিন মাস আগে এই ব্যবধান ছিল ১৬ পয়েন্ট।
এদিকে ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরে যান তা হলে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়েও তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। দেশটির ৩৩ শতাংশ তরুণ মনে করেন ট্রাম্প হেরে গেলে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এর বিপরীতে ৫০ শতাংশ তরুণই মনে করেন- ট্রাম্প হেরে গেলে হোয়াইট হাউসে থাকার জন্য অসাংবিধানিক পন্থা অবলম্বন করবেন। তবে বিষয়টি শুধু তরুণ ভোটারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এবার অনেক রাজনীতিক বিশ্লেষকও মনে করছেন ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে গোল পাকাবেন। আর এই জল্পনা কিছু দিন থেকেই বাতাসে ভাসছে, আর গত বুধবার তিনি নিজেই আরও উসকে দিয়েছেন। ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়- নির্বাচনে হেরে গেলে অথবা ড্র হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা? সরাসরি হ্যাঁ বা না জবাব না দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের ব্যাপারটা দেখতে হবে’।
একই সঙ্গে ডাকযোগে ভোটের ব্যাপারে ট্রাম্প আগে থেকেই বিরোধিতা করে আসছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের ফল সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। এর এসব মন্তব্যের জেরে ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, রিপাবলিকান সিনেট মিট রমনিও ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সংবাদমাধ্যম বোস্টন গ্লোবে এক নিবন্ধের শিরোনাম ছিল- ‘আমেরিকা একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে’। তবে সব কিছুর পর, এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রশ্নাতীত করে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a Reply