শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সিলেটের এমসি কলেজ। এ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হল ও শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ বাসা দখল, ক্যাম্পাসে বহিরাগত অছাত্রদের নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলা এবং সেখানে অবৈধ অস্ত্র মজুদ, ছাত্রাবাসকে মাদক সেবনের অভয়ারণ্য করে তোলা, জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পাশবিক আরেক কা-। ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক নবদম্পতিকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে সেখানে স্বামীকে বেঁধে রেখে নববধূকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনটির এমসি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ছাত্রলীগ। ৮ বছর আগের এ কা-ে মামলাও হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত অভিযুক্ত কারও শাস্তি হয়নি। এমসি কলেজের সেই ছাত্রাবাস পরে ফের নির্মাণ করা হলে হলটির বিভিন্ন কক্ষ দখলে নিয়ে নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নবনির্মিত পাঁচতলা ছাত্রাবাসটিও তাদের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি শিক্ষকের
জন্য বরাদ্দ বাসাও দখলে নিয়ে বসবাস শুরু করে সাইফুর রহমান নামে এক ছাত্রলীগকর্মী।
কলেজসূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে। ছাত্রদের পাশাপাশি অনেক অছাত্রও এখানে আস্তানা গেড়েছে। ছাত্রাবাসের ভেতরে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলে টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে ছাত্রাবাসে মাদক সেবন, ব্যবসা ও জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে তারা। ছাত্রাবাসের ভেতরে অস্ত্র মজুদ করে রাখে।
অপকর্ম অব্যাহত রাখতে বন্ধের সময়েও ছাত্রাবাস ছাড়তে রাজি হননি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কলেজ প্রশাসনও তাদের ছাত্রাবাস থেকে সরাতে পারেনি। উপরন্তু অনেকেরই অভিযোগ, ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের সঙ্গে কলেজ প্রশাসনও জড়িত। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে ঘটে ন্যক্কারজনক এ ঘটনা।
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, কলেজের গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের পাঠ যেন অব্যাহত থাকে, তারা যেন ছাত্রাবাসে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যারা টিউশনি করে কিংবা পার্টটাইম চাকরি করে তাদের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেÑ তাদের কথা ভেবে কলেজের ছাত্রাবাস খোলা থাকলেও ছাত্রাবাসের ক্যান্টিন বন্ধ ছিল, হলে থাকা শিক্ষার্থীরা খাওয়াদাওয়া করত বাইরেই।
তবে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ কক্ষগুলো পরিবার নিয়ে বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় সেখানে শিক্ষকরা থাকতে চান না বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি অবশ্য এও বলেন, সেগুলোর দখল নিয়েছে ছাত্রলীগ।
সূত্র জানায়, অরক্ষিত ছাত্রাবাসে প্রতিদিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বহিরাগতের আনাগোনার পাশাপাশি অনেকেই মাদক সেবন করেন। সেই সঙ্গে জুয়ার আসরও বসে। টিলাগড় ও বালুচর এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গেও এ গ্রুপটি জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে সিলেট ছাগল উন্নয়ন খামারে প্রজননের জন্য আনা উন্নত জাতের একটি পাঁঠা খাওয়ার জন্য ফ্রি না দেওয়ায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগও আসে ছাত্রলীগের ওপর।
নিজেদের মধ্য খুনোখুনি আর নানা অভিযোগে কমিটি একাধিকবার বিলুপ্ত করা হয় সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এর পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি এবং ২০১৯ সালের অক্টোবরে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর পর থেকে সিলেট কমিটিহীন ছাত্রলীগ।
নেতৃত্ব না থাকায় সিলেটে ছাত্রলীগ হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসনির্ভর সংগঠন। সৃষ্টি হচ্ছে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপের। সিলেট ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল এবং গ্রুপিংয়ের কারণে ২০১০ সাল থেকে সর্বশেষ ২০২০ সাল পর্যন্ত সিলেটে খুন হয়েছে অন্তত ১১ ছাত্রলীগ কর্মী।
Leave a Reply