কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়বে কী বাড়বে না সেটি নিয়ে দোটানায় শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বোর্ডগুলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশে শুরু হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। বোর্ডগুলোর অবস্থান এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে না দেয়ার পক্ষে। দুই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আছে। এমন অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা– ছুটি কি আরও বাড়বে, নাকি খুলে দেয়া হবে স্কুল-কলেজ।
বছর প্রায় শেষ হয়ে আসায় বার্ষিক পরীক্ষা হবে কী হবে না তা নিয়েও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে দুই মন্ত্রণালয়।
এমতাবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া স্থগিত হয়ে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও কথা বলবেন শিক্ষামন্ত্রী।
গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার কারণে তা স্থগিত রয়েছে। এর আগে জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সামনে শীতকাল। এ সময় করোনার প্রকোপ আরও বাড়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিশেষজ্ঞরা শীতকালে করোনাঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করছেন।
এমতাবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরেক দফায় বাড়ানোর অনুমান করছেন অনেকেই। আবার এমন আভাসও পাওয়া গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি হিসেবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেয়া হতে পারে। এর পর থেকে নিয়মিত পাঠদান শুরু হয়ে যেতে পারে। তবে এসব বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে ২১ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোই সিদ্ধান্ত নেবে।
ওই দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তারা যখন মনে করবে, তখনই খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এমতাবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া না দেয়ার এখতিয়ার শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তাল। তবে দুই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, তারা এ নিয়ে দোটানায় আছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে।
আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বোর্ডগুলো এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে না দেয়ার পক্ষে। বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়ার কথা ভাবছে বোর্ডগুলো। অবশ্য সেটি নির্ভর করছে কবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তার ওপর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন রোববার বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ছুটির বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। হাতে এখনও সময় আছে। দুই মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ স্কুল খোলা না খোলার বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।
Leave a Reply