নানা জটিলতা শেষে অবশেষে সৌদি আরব ফেরা শুরু করেছেন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে এখনো অনেকেরই উড়োজাহাজের টিকিট এবং ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা কাটেনি। নতুন এক সিদ্ধান্তে যাদের ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে, তাদের ভিসা নবায়নের সুযোগ দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে ভিসা নবায়নে সৌদি আরবের কঠিন শর্তে আবারও অনেকের সৌদি যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নবায়নের জন্য এমন কিছু শর্ত রাখা হয়েছে, যেটি পূরণ করে একজন বাংলাদেশির সৌদি ফেরা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সকল সমস্যা নিরসনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার ফের রাস্তায় নেমেছেন সৌদিগমনেচ্ছু প্রবাসীরা। সকাল ১০টার দিকে তারা রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার কাছে প্রধান সড়কে অবস্থান নেন। পরে সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন তারা। কিন্তু অবরোধের কারণে কারওয়ান বাজার থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
সংগঠিতভাবে ব্যানার হাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং টিকিট দেওয়া নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবিতে সার্ক ফোয়ারার সামনে সড়ক অবরোধ করে সৌদি প্রবাসীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সরে গেলে ধীরগতিতে যান চলাচল শুরু হয়।
পুলিশের ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) এডিসি মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, সড়ক অবরোধের সময় কারওয়ান বাজার থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে গতকাল সোমবারও কারওয়ান বাজারে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
ঢাকার সৌদি দূতাবাস থেকে ভিসা নবায়নে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে নিয়োগকর্তা বা কফিলের আবেদন সংবলিত চিঠির কথা বলা হয়েছে, যা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে। আকামার মেয়াদ লেখা থাকতে হবে সৌদি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (জাওয়াজাত) আবেদনের প্রিন্ট কপিতে। পাসপোর্ট ও রি-এন্ট্রি ভিসার মূলকপি রাখতে হবে সঙ্গে। থাকতে হবে মেয়াদসহ আকামার মূলকপি। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে বের হওয়ার মূল কপি থাকার বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়েছে ভিসা নবায়ন শর্তে।
অপরদিকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষের শিডিউল অনুযায়ী, আজ টোকেনধারী আরও ৫০০ জনকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। যাদের টোকেন নম্বর ১৯০০ থেকে ২৩০০, শুধুমাত্র তাদেরই টিকেট দেওয়া হবে। তবে ৩ হাজারের পরের সিরিয়ালের টোকেন নম্বর যাদের, তারাও টিকিটের জন্য সকাল থেকে ভিড় করেছেন। যেসব প্রবাসী রিটার্ন টিকিট করে সৌদি আরব থেকে দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েন, তারাই এ টিকিট পাচ্ছেন।
প্রবাসীদের ফেরাতে ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সাউদিয়া ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে উভয় এয়ারলাইন্সই। বিমানকে সপ্তাহে ১২টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। ফলে রিয়াদ ও জেদ্দা রুটের সঙ্গে নতুন রুট হিসেবে দাম্মামেও ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণা করেছে বিমান।
শিডিউল অনুযায়ী, জেদ্দাগামী ২২ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৩০ সেপ্টেম্বর, ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১ অক্টোবর, ২৯ মার্চ থেকে ৩১ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৪ অক্টোবর, ১ এপ্রিল থেকে ৪ এপ্রিলের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৫ অক্টোবর, ৫ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিলের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৬ অক্টোবর। রিয়াদগামী ১৬ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১ অক্টোবর, ২১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ ফিরতি টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৩ অক্টোবর, ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চের ফিরতি টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। নতুন রুট দাম্মামগামী ১৬ মার্চ থেকে ১৯ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ১ অক্টোবর, ২১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীদের ফ্লাইট ৩ অক্টোবর, ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চের রিটার্ন টিকিটধারীরা ৫ অক্টোবর।
বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেছেন, সৌদি এয়ারলাইনসকে আরও দুটি ফ্লাইট বেশি পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিমান সৌদির বিভিন্ন রুটে আরও ১২টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে।
Leave a Reply