নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০১১ সালের ৯ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৯ জুলাই। সময়ের পরিক্রমায় হাড়িয়ে গেছে দশ বছর। গঠনতন্ত্র বলছে প্রতি বছর কাউন্সিল এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। তাতে করে বেড়িয়ে আসবে নতুন নেতৃত্ব। দেশ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। কিন্তু বিগত দশ বছরেও মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি বরিশাল ছাত্রলীগ। বিপরীতে দুর্নাম, সমালোচনার ভাগিদার আর বিপুল টাকার মালিক বনে গেছেন পদধারীরা। এক সময়ের সম্ভাবনাময়ী ছাত্রলীগ নেতারা এখন ঘর সংসার করে পুরো দস্তুর সংসারী।
প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রলীগের এমন বেহাল দশা হলে পরবর্তী নেতৃত্ব কিভাবে পাবে দল?
বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি সর্বশেষ ২০১১ সালে অনুমোদন পেয়েছিল শর্তসাপেক্ষে; নির্ধারিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা। পাশাপাশি সঠিক সময়ে কাউন্সিল দিয়ে নতুনদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ারও তাগিদ ছিল। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ফলে তৃণমূল ছাত্রলীগের মাঝে ক্ষোভ জমছে। জানা গেছে, ২০১১ সালের ৯ জুলাই হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাতকে সভাপতি, আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক এবং সৈয়দ শামসুদ্দোহা আবিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩ সদস্যের জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। একই সময়ে মো. জসিম উদ্দিনকে সভাপতি, অসীম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। উভয় নেতৃবৃন্দের প্রতি নির্দেশনা ছিল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।
এরমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ২০১৪ সালে ১০৯ সদস্যে কমিটি গঠন করতে পারলেও মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ তা পারেননি। তাছাড়া কথিত নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান ছেড়েছেন রাজনীতির মাঠ, কোনঠাসা হয়ে আছেন সভাপতি জসিম উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে বিরোধী গ্রুপ অভিযোগ করেছেন, সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ছাত্রলীগ নেতা হয়েছেন। তাছাড়া মূলদলের নেতাদের পরস্পর বিরোধীতার যাতাকলে পড়ে তিনি রাজনীতির মাঠে নিস্ত্রিয়। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজিও নন তিনি।
মো: জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, বরিশালে বিএম কলেজে কর্মচারীকে কুপিয়ে জখম, হাতেম আলী কলেজর প্রধান সহকারীকে কক্ষে ঢুকে চাঁদা না পেয়ে মারধরের ঘটনায় যেসব ছাত্রলীগ নেতার নাম আসছে তারা ছাত্রলীগের সাথে আদৌ জড়িত নন। কেউ নিজে এসে ছাত্রলীগের পরিচয় দিলেইতো তিনি ছাত্রলীগ হয়ে যাবেন না। কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেননি। সাংগঠনিকভাবে সফল না হলেও জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের যে সমস্ত নেতারা আলোচনায় ছিলেন তারা একে একে বিয়ে করে ছাড়ছেন সংগঠন। বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবে না এমন নিয়ম থাকলেও তার তোয়াক্কা নেই। তবে ছাত্রলীগের নেতারা মনে করেন, সংগঠনটি অনেক বড়। ফলে নেতৃত্বে ঘাটতি আসবে না। জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে বেশ ঘটা করে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বিয়ে করেছেন। অথচ তারাই ছিলেন পরবর্তী নেতৃত্বের শীর্ষে। বিয়ের তালিকায় রয়েছেন আরও ডজনখানেক পদধারী ছাত্রলীগ নেতার নামও। শুধু সহ-সভাপতি নন কদিন আগে সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত ধুমধাম করে সেরেছেন বিয়ের কাজ। আর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক একাধিক সন্তানের জনক।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারে না। যারা বর্তমানে বিয়ে করছেন তারা দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নৃতেত্ব দিয়েছেন। সামনে তারা যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবকলীগ সহ আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠন গুলোর সঙ্গে যুক্ত হবেন। সুমন বলেন, ছাত্রলীগে অনেক নেতা রয়েছেন যারা ত্যাগী কিন্তু আলোচনায় নেই। তাদের মধ্যে থেকে নতুন কমিটি গঠন হবে।
Leave a Reply