নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিভিন্ন যানবাহনে এলইডি (আলোক নিঃসারী ডায়োড) লাইট ব্যবহারের কারণে বরিশালে বাড়ছে দুর্ঘটনা। মাহেন্দ্র, অটোরিকশা, সিএনজি এবং ইজিবাইকে ব্যবহার করা এলইডি লাইট রাতের বেলা অন্যসব যানবাহনের চালকের দৃষ্টি সীমায় বাধার সৃষ্টি করছে। অতি উজ্জ্বল আলোর কারণে বিপাকে পড়েন পথচারীরাও। তবে যানবাহনে হেড লাইট হিসেবে এলইডি লাইট ব্যবহার বন্ধে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) অভিযান জোরদার করবে বলে জানা গেছে। বরিশাল মহানগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৩) আজ প্রায় দেড় মাস সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঘরবন্দী। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। চাকরিসূত্রে তাকে মোটরবাইক চালিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। গত আগস্টের ১৭ তারিখ নগরীর চৌমাথা এলাকায় মোটরবাইক চালিয়ে বাড়িতে ফেরার সময় বিপরীত পাশ থেকে আসা একটি অটোরিক্সার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তাঁর। এজন্য অটোরিক্সার এলইডি লাইট দায়ী বলে দাবি করেন তিনি। নজরুল বলেন,‘সেদিন বিপরীত পাশ থেকে আসা দ্রুতগামী অটোরিক্সার এলইডি লাইটের আলো আমার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। হঠাৎ কিছু দেখতে না পেয়ে মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে নগরীর শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) সার্জারি বিভাগে নিজেকে আবিষ্কার করি’। দুর্ঘটনায় তাঁর এক পা এবং বুকের একটি হাড় ভেঙে যায়।
নজরুল ইসলামের মতো এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে নিশ্চিত করেছেন শেবাচিম পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন। তিনি বলেন,‘ বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই দ্রুতগামী অটোরিকশা (মাহিন্দ্রা, সিএনজি ইত্যাদি) দুর্ঘটনায় আহত মানুষেরা হাসপাতালে আসছে। তাদের অনেকে শুধুমাত্র এলইডি লাইটের কারণে দৃষ্টি সীমায় সমস্যা হবার কারণে যানবাহন চালনার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। মাঝখানে করোনা পরিস্থিতিতে কিছুদিন এই সংখ্যা কিছুটা কম ছিল’। উদ্বেগজনক এই বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার সজাগ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
বরিশালের সচেতন মহল থেকে দাবি উঠেছে যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের বরিশাল আঞ্চলিক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন,‘বরিশাল শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে হরদম চলে মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা, অটোভ্যান এবং ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন। এসব যানবাহনের কারণে দিনের বেলা যেমন সৃষ্টি হয় যানজট, তেমনি রাতে বাড়ায় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে যানবাহনগুলোতে ব্যবহার করা অতি উজ্জ্বল আলোর এলইডি বাতি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ’। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) বরিশাল জেলা কমিটির আহবায়ক সৈয়দ জিয়াউল হাসান জানান, উন্নত বিশ্বের যানবাহন গুলোতে এলইডি লাইটের ব্যবহার চোখে পড়ে না।এলইডি লাইটের কারণে বিপরীতমুখী যানবাহনগুলো সমস্যায় পড়ে। এছাড়া অতি উজ্জ্বল আলোর কারণে বিপাকে পড়েন পথচারীরাও। আমরা যানবাহনে এলইডি লাইট ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ চাই। যানবাহনে এলইডি লাইটের কারণে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোদ বিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার। তিনি বলেন,‘প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যানবাহনে যে ধরনের হেড লাইট যুক্ত করে বাজারে ছাড়ে তা প রিবর্তন করে রাস্তায় নামায় মালিক এবং চালকেরা।স্বল্প মূল্যের এলইডি লাইট যুক্ত যানবাহন বিপরীত পাশের যানবাহনের চালকের দৃষ্টি সীমায় অতিরিক্ত আলো ফেলে দুর্ঘটনা ঘটায়’।এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, যানবাহনে এলইডি বাল্ব যুক্ত হেডলাইটের ব্যবহার বন্ধে অভিযান শুরু করেছিলাম আমরা। যা ভবিষ্যতে আরো জোরালো করা হবে।
Leave a Reply