বার কয়েক চেষ্টা করেছি। ভিডিওটি দেখে শেষ করতে পারিনি। এ অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই। অস্বীকার করার জো নেই, এটাই সময়ের বাস্তবতা। ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। আমাদের মস্তিষ্ক তা নিতে পারছে না। দেখে ওঠার সাহস করছে না। কিন্তু এটাও সত্য, আমাদের দীর্ঘ নীরবতাই তৈরি করেছে এই ধরনের বাস্তবতা।
ঘটনাটি ৩২ দিন আগের। না, কোনো সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করেনি।
প্রায়শ’ই আপনি শুনতে পাবেন হাজার হাজার অনলাইন, পত্রিকা আর টেলিভিশন চ্যানেলের কথা। কিন্তু এর প্রায় সবই যে সংবাদমাধ্যম নয়, কেবল প্রচারমাধ্যম তা আরো একবার খোলাসা হয়ে গেলো। শত শত বছর ধরে গ্রামীণ জনপদে একধরনের স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও তার সমালোচনা অনেক। কিন্তু কখনো কখনো এটা কার্যকরও বটে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এই বর্বরতায় দেখা গেলো স্থানীয় মুরব্বীরাও কোনো ভূমিকা রাখেননি। তারা কি অসহায়, না তারাও এই সিস্টেমের অংশ সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। পুলিশ এবং প্রশাসন সবাই ছিল নীরব। কেউ কিচ্ছু জানতো না।
এতোদিন পর ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। অপরাধীরা গৃহবধূকে তার ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতন আর ধর্ষণচেষ্টা করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা তার ভিডিও ধারণ করে। চাঁদা দাবি করে। বিচার চাওয়াতো দূরের কথা ওই গৃহবধূকে পালিয়ে নিজের জীবন রক্ষা করতে হয়। এখন ভিডিও দেখে প্রশাসনের টনক নড়েছে। ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। খুব দ্রুতই আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কে না জানে এসবই হচ্ছে মলম দিয়ে ক্যানসার সারানোর চেষ্টা। কেন এতোদিনে মামলা হয় না, কেন নির্যাতিতা কে পালিয়ে বাঁচতে হয় একটি স্বাধীন দেশে সে প্রশ্নের জবাব খোঁজা হচ্ছে সামান্যই।
যদিও ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবার কথায় এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই পাওয়া যায়। ওই গৃহবধূর বাবা জানান, আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই। (সূত্র: জাগো নিউজ)। গতকালই প্রথম আলোয় পড়ছিলাম এক বাবা বলেছেন, ভাইরাল হয়নি তাই বিচার পাইনি। ৬০৪ দিন হলো। তার সন্তান মারা যান বাসচাপায়। কিন্তু ভাইরাল না হওয়া, কোনো আন্দোলন না হওয়ায় তিনি কোনো বিচার পাননি।
এই যখন অবস্থা তখন সুবর্নচরের সেই গৃহবধূর কথা কি আমাদের মনে আছে। প্রভাবশালীদের কথা অমান্য করে ভোট দেয়ায় কী ভাগ্য তাকে বরণ করতে হয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের ঘটনা এখনো মিইয়ে যায়নি। এ এক মেগাসিরিয়াল। যার কোন শেষ নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই পরিস্থিতি? কেন প্রতিটি ঘটনাতেই মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে? কেন ফেসবুকে ভাইরাল করে বিচার দাবি করতে হবে? কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলবে। সবচেয়ে সংক্ষেপে এর উত্তর হচ্ছে ইনসাফের ঘাটতি। একধরনের প্রভাবশালীরা যারা মনে করেন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তা থাকেনও। সংবাদমাধ্যম তাদের ঘাটায় না। কখনো ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায়। বিবেক বিক্রি হয়ে যাওয়া সময়ে এটা নির্মম বাস্তবতা। এখানে সবকিছু মাপা হয় দল আর ব্যক্তিপূজার নিরিখে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বা ধবংসে ব্যক্তির ভূমিকার থেকে বেশি গুরুত্ব পায় কে কার কাছ থেকে কীভাবে সুবিধা পেলেন তা। সমাজ, পুলিশ, প্রশাসন কেউই এর বাইরে নয়। আইনের লম্বা হাত অসহায়ভাবে দেখে অপরাধীরা হেটে বেড়াচ্ছে বীরদর্পে। এই অনাচার আর অব্যবস্থার সহজ সমাধান একটাই- ইনসাফ, ইনসাফ এবং ইনসাফ।
Leave a Reply