বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নে সেন্ট আলফ্রেডস্ স্কুলে পরীক্ষা গ্রহণ (চলমান) করছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সিষ্ঠার ইবন। রয়েছে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ। পাদ্রীশিবপুরের সেন্ট আলফ্রেডস্ হাই স্কুলে গত ৫ অক্টোবর থেকে স্কুল খোলা রেখে অভিনব কৌশলে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহণ চলছে। ১০ অক্টোবর সেন্ট আলফ্রেডস স্কুল এন্ড কলেজের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার্থী ছাত্র- ছাত্রী সহ অভিভাবকদের ঠাসাঠাসি ভিড়। সকল ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের হাতে দেখা যায় বেতনাদি আদায়ের রশিদ বই ও টাকা আদায়ের রশিদ। বিস্তারিত জানতে চাইলে দশম শ্রেণীর এক পরীক্ষার্থী, জানান ৩০০ টাকা করে মাসিক বেতন হারে দুই মাসের বকেয়া বেতন ৬০০ টাকা ও পরীক্ষার ফি বাবদ ৬০ টাকা মোট ৬৬০ টাকা প্রদান করিয়া প্রশ্ন পত্র সংগ্রহ করে নিতে হয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থী সজীব টুডু জানান, ৪০০ টাকা হারে মাসিক বেতন দুই মাসের ৮০০ টাকা ও পরীক্ষার ফি বাবদ ৮০ টাকা মোটা ৮৮০ টাকা জমা দিয়ে প্রশ্ন পত্র সংগ্রহ করতে হয়। প্রশ্নপত্র সংগ্রহের চারদিন পরে উত্তর পত্র জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট আলফ্রেডস্ স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষিকা জানান, আমরা পরীক্ষা গ্রহণ করতেছি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অনুমতি নিয়ে। ৫ অক্টোবর থেকে পরীক্ষা শুরু করেছি ১৪ অক্টোবার পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। তিনি আরো জানান আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ জন শিক্ষক একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ১ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী শুধু সরকারের বেতন পাচ্ছি। এছাড়াও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের বেতন দিতে হয় এজন্যই আমরা বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার ফি আদায় করেছি। প্রধান শিক্ষিকার কাছে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা বা অনুমতির পত্র দেখতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন।
পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অভিভাবক মোঃ মাসুম বিল্লাহ জানান, ইতিমধ্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বর্তমান করোনা মহামারী ও দুঃসময় বিগত ফেব্রুয়ারি ২০ থেকে জুন ২০ শিক্ষার্থীদের বেতন তাগিদ দিয়ে গ্রহণ করে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। অসহায় গরীব অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কোন সহানুভুতি প্রদর্শন না করে বরং তাদের অতিরিক্ত অর্থের তাগিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে বিমুখ করেছেন। বর্তমান সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ ও বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম অযোগ্য শিক্ষক দ্বারা পরিচালনা করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান খ-কালীন শিক্ষক দ্বারা ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শুধুমাত্র অযোগ্য খ্রিস্টান ধর্মীয় শিক্ষক দ্বারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা করছে। অনেক শিক্ষক বোর্ড পরীক্ষায় বার বার ফেল করার পরেও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি এইচএসসি পাশ করে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা বর্তমান সরকারের বিধানসমূহ অগ্রাহ্য দুরভিসন্ধি মূলকভাবে অর্থ আদায় করেছে। করোনা ভাইরাসের তা-বে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে। সারাদেশে মহামারী করোনাভাইরাসের অতিরিক্ত তা-বে চলতি বছর (২০২০) আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের মতে, আসন্ন শীতে দেশে করোনার প্রকোপ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এই কারণে করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিৎ হবে না বলে মনে করছেন তারা। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জীবন সঙ্কটে ফেলতে চায় না সরকার। তাই পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পক্ষেই মত দিয়ে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই। ইতিমধ্যে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠেনে সকল প্রকার পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুরের সেন্ট আলফ্রেডস্ হাই স্কুলে গত ৫ অক্টোবর থেকে স্কুল খোলা রেখে পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব আকমল হোসেন খান জানান, বেতন গ্রহণ ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়টি আমরা অবগত নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে বকেয়া বেতন টাকা আদায় ও বাড়তি লাভের আশায় এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করছে তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার জনাব আনোয়ার হোসেন জানান, কোন রকম অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটলে সঠিকভাবে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply