ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম আদালতে এক আসামির ওপর হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে আসামি মোখতার আহমদ এবং তার সঙ্গে থাকা আরিফুর রহমান ও জাবেদ আহত হন। এর মধ্যে আরিফকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় নতুন আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
হামলার মুখে ওই তিনজন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের এজলাসে ঢুকে নিজেদের রক্ষা করেন। পরে বিচারক জামিনে থাকা মোখতারকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে এ ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন। ছুরিকাঘাতের শিকার আরিফ সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি মিজানুর রহমানের ভাই। এ ঘটনায় মোখতার আহমদ এক নারীসহ ১৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। হামলাকারীরা নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী বলে দাবি করেছেন মোখতার। তবে এ ব্যাপারে মাসুমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুদীপ্ত হত্যার আসামি মোখতারের আইনজীবী শাহেদুল আজম শাকিন জানান, মোখতারসহ ১০ আসামি গতকাল সকালে আদালতে হাজিরা দেন। হাজিরা শেষে বের হওয়ার পর আদালত কক্ষের সামনেই প্রথমে ২০-২৫ জন মিলে মোখতারকে টানাহেঁচড়া শুরু করে। হাজিরা দেওয়া কয়েকজন আসামিসহ মোখতারের কয়েকজন বন্ধু তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন হামলাকারীরা। এর মধ্যেই অর্ধশত তরুণ-যুবক স্লোগান দিয়ে
সেখানে আসেন এবং মোখতারদের মারধর শুরু করেন। কয়েকজন ছোরাও বের করেন। হামলায় আহত রক্তাক্ত মোখতারসহ তিনজন কোনোমতে ছাড়া পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে ঢুকে যান। মোখতার নিজেই আদালতকে বিষয়টি জানান। তখন আদালত তাকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।
আইনজীবী শাকিন আরও বলেন, হাজিরা দেওয়ার পর মোখতার নিজেই আমার কাছে তার ওপর হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। আমি আদালত কক্ষে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার কথায় গুরুত্ব দেননি। পরে যখন হামলা শুরু হয়, পুলিশ সদস্যদের দেখি ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় আদালত কক্ষের ভেতরে জড়ো হয়ে আছেন। পরে কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ আসে। ততক্ষণে হামলাকারীরা চলে যায়।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, প্রথমে মোখতারের ওপর হামলা হয়। তারপর আসামিদের দুপক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। মোখতার ও আরিফ নামে দুজন সামান্য আহত হয়েছেন। মোখতারের বন্ধু জাবেদকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মোখতার আহমদ বলেন, গত রবিবারও দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারীরা আমাকে মারধর করেন। বিষয়টি কোতোয়ালি থানার ওসিকে জানিয়ে আমি সোমবার (গতকাল) আদালতে হাজিরা আছে বলে জানাই। এজন্য একটি জিডিও করার কথা বলি। কিন্তু ওসি জিডি না নিয়ে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বাস দেন। সকালে ফোন করে ওসিকে না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে আদালতে যাই। হাজিরা শেষ করেই হামলার শিকার হই।
তবে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আমাদের সময়কে বলেন, তারা বলেছিল আদালতে হাজির হয়ে আমাদের জানাবে। তারা জানানোর আগেই হামলার ঘটনা ঘটে যায়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, আদালত অঙ্গনে এ ধরনের ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক। আদালতে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তা হলে সেটা উদ্বেগের। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।
২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তার বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস মামলা করেন। ঘটনায় জড়িতরা সবাই নগরীর লালখানবাজার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে পরবর্তী সময় আসামি মোখতার আহমদসহ কয়েকজনের সঙ্গে মাসুমের সম্পর্কের অবনতি হয়। এদের মধ্যে আসামি মিজানুর রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাসুমের নির্দেশে খুনের কথা উল্লেখ করেন।
Leave a Reply