নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘ধান-নদী-খাল’ এই তিনে বরিশাল। খাল-বিল-নদী পরিবেষ্টিত বরিশালের রূপে মুগ্ধ কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই বরিশালকে ‘বাংলার ভেনিস’ আখ্যায়িত করেছিলেন। আজ নদী আছে, ধান আছে। নেই শুধু খাল। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেন নির্মাণ এবং ভরাটের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে খালগুলো। যাও আছে তা দখল করেই নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রকাশ্যেই খাল দখলের এ মহোৎসব চললেও প্রতিরোধে নেই কোন দৃশ্যমান তৎপরতা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতার কারণেই আজ অস্তিত্ব সংকটে খালগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল মহানগরী জুড়ে এক সময় ২২টি খাল ছিল। যার মধ্যে অন্যতম বটতলা-চৌমাথা খাল। যে খালটি শহরের বটতলা, চৌমাথা নবগ্রাম রোড, রায়পাশা-কড়াপুর হয়ে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর সাথে মিশেছে। এক সময় এই খাল থেকে ছোট-বড় নৌকা চলাচল করতো। কিন্তু এখন খালের চৌমাথার অংশ অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। তারা খালের দুপাশের বিশাল অংশ দখল করে ভরাট করে ফেলেছেন। এর ফলে সেখান থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরনের নৌকা চলাচল। এমনকি দখলের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া খালে থাকা ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চৌমাথার বাজারের পাশে খালের একটি অংশ ভরাট করে তৈরী করা হয়েছে হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগলের মাংস বিক্রির দোকান। যার কারণে সেখানকার খালের পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ঘটেছে। প্রতিদিন বাজারের ময়লা আবর্জনা খালে ফেলার ফলে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
প্রতিদিন এই বাজারে কয়েকশত মুরগী কেনা বেচা হয় এবং জবাইকৃত হাঁস, মুরগী, গরু ও ছাগলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। এর ফলে একদিকে নষ্ট হচ্ছে খালের ঐতিহ্য, অন্যদিকে জমে থাকা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ওই এলাকার বাসিন্দারা। সেই সাথে বর্ষা এলেই সৃষ্টি হচ্ছে সীমাহীন জলাবদ্ধতা। এ ব্যাপারে চৌমাথা এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী মইনুদ্দিন জানান, ‘খালের পাশে দোকান হওয়ায় খালে জমে থাকা বর্জ্যরে দুর্গন্ধে ব্যবসা করতে সমস্যা পোহাতে হয় নিত্যদিন। বাজারের হাঁস, মুরগি, গরু ও ছাগলের বর্জ্য খালে ফেলার ফলে সেই বর্জ্য জমে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। খালে ময়লা ফেলতে নিষেধ করা হলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বরিশাল জেলার সেক্রেটারি রনজিত দত্ত জানান, খালের যায়গা দখল করে হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগলের দোকান তৈরী করা দ-নীয় অপরাধ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় দেখা যাবে তারা খাল দখল করে বিল্ডিং তৈরী করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি, খালের জায়গা মেপে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য। যাতে আর কেউ খাল দখল করতে না পারে। এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন এর বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের প্রধান ডা. রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘চৌমাথা খাল দখল বা বর্জ্য ফেলার বিষয়টি আমরা অবগত নই। কেউ এমন কাজ করে থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি খাল উদ্ধার করা হবে। তবে কেউ যদি লিখিত ভাবে সিটি কর্পোরেশনের কাছে অভিযোগ করে তবে অতিসত্ত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply