আনোয়ার হোসেন ॥ বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবের হাট শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের ৫শত’র অধিক শিক্ষার্থীর বাড়ীতে প্রশ্নপত্র ও খাতা পাঠিয়ে পরীক্ষা নিয়ে কোটি টাকার বানিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ডিজির সাথে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি দিক নির্দেশনা দেন প্রশ্নপত্র ও খাতা শিক্ষার্থীর বাড়ীতে পাঠিয়ে পরীক্ষা নেয়া যাবে। কিন্তু বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান জানায় সরকারের পক্ষ থেকে এমনকি আমাদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বাসায় প্রশ্ন দিয়ে পরিক্ষা নেওয়ার কোনো অনুমতি নেই।
সংশ্লিষ্ট সুত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার বন্দর থানার আওতাধীন শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। কলেজটির ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও বেশ ভালো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা দূর্যোগের অজুহাত দেখিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে কলেজ অধ্যক্ষের দূর্ণীতি।
অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে পরিক্ষা দিচ্ছে। আর এ সুযোগটি করে দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ নিজেই। বিনিময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রতি নেয়া হয়েছে ৯ হাজার টাকা। টাকা হাতে পেলেই অন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বাড়ীতে পৌছে দেয়া হয়েছে প্রশ্ন ও খাতা। এভাবে বাড়ীতে বসে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে একাধীক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের এমন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অবমূল্যায়নসহ ধ্বংস করা হচ্ছে। তারা অশংকা প্রকাশ করে বলেন, একমাত্র কলেজে অধ্যক্ষের কারনে এবছর কত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হবে, তার হিসাব নাই। তারা আরোও বলেন, করোনার দোহাই দিয়ে কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রী দিয়েছেন অটো পাশ। তার ভিতরে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বসে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আসলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে স্বেচ্ছায় ঠেলে হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। অভিভাবকরা মনে করেন, তাদের সন্তানের খাতা ও পরিক্ষায় পাশ সঠিকভাবে মূল্যায়ন হবে কিনা? এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ও পরীক্ষার ফলাফল অবমূল্যায়নের ভয়ে দিন কাটায়, এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষা ও পরীক্ষার খাতাগুলো শিক্ষকদের কারণে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে তারা মনে করেন। অভিভাবকরা বলেন, বাড়িতে বসে পরীক্ষা না নিয়ে কলেজে বসে নেওয়া উচিত ছিলো।
ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে, কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল আনোয়ারুল হক, ইংরেজী প্রভাষক মশিউর রহমান, অর্থনৈতিক প্রভাষক শহিদুল ইসলাম পান্না, কৃষি প্রভাষক হৃদয় চন্দ্র কাইত, দর্শণ প্রভাষক বিদয় কৃষ্ণ, বাংলার প্রভাষক মাহামুদা বেগম, হিসাব বিজ্ঞান প্রভাষক শংকর, ইতিহাস প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদাউস খুশব, প্রভাষক শান্তনাসহ অনেকেই কলেজ অধ্যক্ষের দূর্ণীতির সাথে সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধীক অভিভাবক জানান, কলেজে পরীক্ষা নিলে আমরা টাকা দেবো না ভেবে বাড়ীতে বসে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করেন। করোনা অজুহাতে আমাদের সন্তানদের জিম্মি করে পুড়ো বছরের মাসিক চাঁদাসহ ৯ হাজার করে টাকা নিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ। কিছু সংখ্যক অসহায় অভিভাবক বলেন, করোনার মধ্যে মানুষের আয় নেই পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তার ভিতরে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এমনকি পরিক্ষা নাম দিয়ে টাকা লোভী শিক্ষকরা টাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে।
নাম প্রকাশের শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, আসলে একধিকে অটো পাশ অন্যদিকে বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকুরীর জন্য গেলে কতো যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে সেটা আল্লাই ভালো জানেন। তিনি আরোও বলেন, ২০২০ সালের পরীক্ষার পাশ দেশের চাকুরীর ক্ষেত্রে সারা জীবন সবার কাছে প্রশ্ন মুখী হয়ে থাকবে। আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে?
অনিয়মের বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মসিউর রহমান দৈনিক দখিনের খবরকে মোবাইল ফোনে বলেন, আমাদের ডিজি বলছে ছাত্রদেরকে পড়ালেখার মধ্যে আনার জন্য প্রশ্ন খাতা তাদেরকে দেওয়া হয় এবং তারা বাড়িতে বসে পরীক্ষা দেয় তাহলে ভালো হয়। এটা কি আপনাদের বোর্ডের সিধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এই সিদ্ধান্ত আমাদের ডিজি মহোদয়ের। অধ্যক্ষ বলেন, শুধু আমাদের কলেজে এমন তা নয়, হাতেম আলী কলেজ, উদায়ন স্কুল, চাখার কলেজসহ বহু কলেজে এই ভাবেই পরিক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর এই বিষয়গুলো নিয়ে কোথাও কোনও আলাপ আলোচনা নেই কিছু বাটপার টাউটার সাংবাদিক আছে তারা এগুলো করেন।
পরীক্ষা বাড়িতে বসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ৯ হাজার টাকা করে আদায় করা কি অনিয়ম হলো না এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি এড়িয়ে যান
শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুছ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এমনকি আমাদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বাসায় প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো অনুমতি নেই। কেউ যদি নিয়ে থাকে তাহলে তারা বেআইনিভাবে পরীক্ষার নাম দিয়ে অর্থ বাণিজ্য করছেন। আপনারা নিউজ করে ওই সকল পরিক্ষা বাণিজ্য শিক্ষকদের মুখোশ জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেন।
Leave a Reply