রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) একটি হিফজখানা (হাফেজিয়া মাদ্রাসা) চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের নামের সঙ্গে ‘মিল রেখে’ ওই হিফজখানার নামকরণ করা হয়েছে ‘সোবহানিয়া আলকুরআনুল কারীম হিফজখানা’। আগামী মাসে সেখানে ছাত্রদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান প্রশাসনের সময় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থান জামে মসজিদের পুনর্নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের ৬ মে ওই মসজিদের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, রেজিস্ট্রার এম এ বারি, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ। ওই মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ‘সোবহানিয়া আলকুরআনুল কারীম হিফজখানা’ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে একটি নামফলকও স্থাপন করা হয়।
ওই হিফজখানার নামকরণের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আলী হোসেন জানান, তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম পরামর্শ করে এই নামের বিষয়ে উপাচার্য আবদুস সোবহানকে বলেছিলেন। পরে উপাচার্য সেই নাম রাখার বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন।
উপাচার্যের নামের সঙ্গে মিল রেখে হিফজখানার নাম রাখলেন কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাফেজ আলী হোসেন জানান, উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের সময় ওই হিফজখানা চালু হয়েছে, তাই তার নাম দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সোবহান মানে তো পবিত্র, স্যারের নামের সাথে মিল আছে। আমরা দোয়াও করব, স্মরণ করব যে উনি করেছেন।‘
নামকরণের আগে উপাচার্যকে জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে ওই ইমাম বলেছিলেন, ‘আপনার জন্য দোয়া করব, ভবিষ্যতে আমরা থাকব না, আপনার উদ্যোগে যখন এটা হলো, তখন একটু দোয়ার জন্য আমরা বলব যে, উনার নামে দোয়া করো। সে জন্যই সোবহান স্যারের নামের সঙ্গে মিল রেখে এটা করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আলী হোসেন আরও জানান, ‘সোবহানিয়া আলকুরআনুল কারীম হিফজখানা’ নামকরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের মৌখিক অনুমোদন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে হিফজখানা চালু ও উপাচার্যের নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘সত্যি সত্যি যদি উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের নামের সঙ্গে মিল রেখে হিফজখানার নামকরণ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এটা এক ধরনের অন্যায়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পদে কারও নাম দিতে গেলে বিভিন্ন কমিটির সিদ্ধান্ত লাগে, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন দরকার হয়। এই কাজে এগুলো হয়েছে কি না, সেটা এখনো আমি জানি না। তবে উপাচার্যের নামে এটার নামকরণ করার কোনো কারণ নেই।‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান চালু হলে তার সিলেবাস কী হবে, পাঠ্যক্রম কী হবে-সে বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন লাগে। সেখানকার ফান্ড কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট অনুমোদন থাকতে হবে। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কেন সেটার অনুমোদন দেবে বা অর্থ দেবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে হিফজখানা চালানোর বিষয়ে ইউজিসির কোনো নীতিমালা আছে কি না, সেই প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এ রকম ফান্ডিং করার আমাদের সুযোগ নেই। আলাদাভাবে আমার মনে হয় না এমন কিছু করার সুযোগ আছে। কশিমনে এ বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।’
এসব বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের নামের সঙ্গে মিল রেখে হিফজখানা চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই সাধারণত স্কুল-কলেজ থাকে। যেখানে ওই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনা করেন। বাইরে থেকেও সেখানে কিছু শিক্ষার্থীরা পড়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কর্মরত আছেন, তাদের সকলের পরিবারের সদস্যরা, তাদের জন্যই ওখানে হাফেজি পড়ার জন্য খোলা হয়েছে কি না, সেটাতো আমি জানি না। জেনে আমি জানাতে পারব।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক মনীষী কুরআনের হাফেজ ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে হিফজখানা থাকতে পারে।’
Leave a Reply