করোনার প্রাদুর্ভাবে বড় বড় অনেক প্রকল্পের কাজ হারিয়েছে স্বাভাবিক গতি। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ ছিল সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর একটি। স্বাভাবিক সময়েই প্রকল্পটি চলছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ধীরগতিতে। আর করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকটাই গতিহীন হয়ে পড়েছে প্রকল্পটি।
বহুল আকাক্সিক্ষত উত্তরাঞ্চলের এ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণকাজের ডিপিপিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের জুন মাস। কিন্তু এ সময়কালে সম্ভব নয় জানিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয় দেড় বছর। সেই হিসাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় অনেকটা সময় কেটে যায়। এর পর আবার ছোবল হানে করোনা। সার্বিক বিবেচনা থেকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের জুন মাসের আগে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
পাইপলাইনের পাশাপাশি বিতরণ লাইন নির্মাণেও একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের আওতায় বিতরণ লাইন হবে ১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর মধ্যে রংপুর শহরে ৪৪ কিলোমিটার, পীরগঞ্জে ১০ কিলোমিটার এবং নীলফামারী ও উত্তরা ইডিজেড এলাকায় ৪৬ কিলোমিটার। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রকল্পটির ডিপিপি এখন পরিকল্পনা কমিশনে আছে। এটিও ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জিএম (প্ল্যানিং) ফজলে আলম।
প্রকল্পটির আওতায় বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হবে এবং ১০০ এমএমএসসিএফডিসিজিএস (সিটি গেট স্টেশন) ৫০ (রংপুর) এবং ২০ (পীরগঞ্জ) এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন টিবিএস (টাউন বর্ডার স্টেশন) স্থাপন করা হবে।
বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর সঞ্চালন পাইপলাইনের প্রকল্প পরিচালক খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, পাইপলাইনের মালামাল ভারত, চীন ও ইতালি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মালামাল দেশে এসে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। বগুড়া ও নীলফামারীতে চার ধারা শেষে এখন চলছে, যৌথ তদন্ত যা প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে রংপুরে যৌথ তদন্ত চলমান, গাইবান্ধায় ডিপিও চলছে। এর পর প্রাক্কলিত অর্থ ছাড় শুরু হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে মালামাল শিপমেন্টে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। কিন্তু মাস ছয়েক পিছিয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় আশা করছে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। সূত্র বলছে, মাঠপর্যায়ে দৃশ্যমান না হলেও এ প্রকল্পের পাইপ আমদানি প্রধান একটি কাজ, যা সফলভাবে শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ জন্য ৪৩৬ একর ৮৭ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হবে। মূল পাইপলাইন সংযোগের ক্ষেত্রে ৬টি নদী ও ২টি খাল রয়েছে। এগুলোর দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার। এ অংশের কাজে বেশ জটিলতা রয়েছে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান বলেন, করোনার কারণে কিছুটা ব্যাহত হলেও আমরা সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। পাইপলাইনের বিদেশি মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে চলে এসেছে। নদী পারাপারের পাইপলাইনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
শিল্প কারখানার প্রসারে অন্যতম উপাদান জ্বালানি শক্তির জোগান। এ শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ যে অঞ্চলে যত আগে নিশ্চিত করা যাবে, সে অঞ্চলে শিল্প কারখানার বিস্তার তুলনামূলকভাবে তত বেশি হবে। উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পের প্রসার নেই বললেই চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গ্যাসের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো জ্বালানি ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এতে বিশাল অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হলে ওই অঞ্চলজুড়ে গড়ে ওঠবে একের পর এক শিল্প কারখানা; সঙ্গত কারণেই রাজধানী ঢাকায় শিল্প কারখানার চাপও কমে আসবে।
Leave a Reply