ডিজিটাল যুগেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩৭ বছরের পুরনো একটি রাডার। দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবস্থিত রাডারটি এতই পুরনো যে, অনেক সময় এতে ধরা পড়ে না বিমানের গতিবিধি। ফলে ঝুঁকি নিয়েই বিমান উড্ডয়ন, অবতরণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
অবশেষে অ্যানালগ রাডারটির স্থলে অত্যাধুনিক ডিজিটাল রাডার স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের আকাশসীমায় সব ধরনের বিমানকে শনাক্ত করতে ফ্রান্সের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক রাডার কেনা হচ্ছে। এ জন্য ফ্রান্সের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মধ্যে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। চলতি বছরের ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিমান চলাচল সম্পর্কিত কারিগরি সহায়তা ও তথ্য আদান-প্রদানে ফ্রান্সের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন এবং বেবিচকের মধ্যে ওই চুক্তি স্বাক্ষরের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে নতুন রাডারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও চার বছরেরও বেশি।
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিএস-এটিএম (রাডারসহ) যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম সরাসরি জিটুজি ভিত্তিতে ক্রয়ের (ডিপিএম) লক্ষ্যে ‘থ্যালস টেকনোলজি’র কাছ থেকে প্রাপ্ত কারিগরি প্রতিবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচক কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়- শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিএস-এটিএম (রাডারসহ) সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি সরাসরি জিটুজি ভিত্তিতে ক্রয়ের (ডিপিএম) লক্ষ্যে আইসিএও টিসিবির ভেটিংকৃত এবং ‘থ্যালস টেকনোলজি’ থেকে প্রাপ্ত কারিগরি প্রস্তাব গ্রহণ; আইসিএও টিসিবির ভেটিং এবং কারিগরি উপকমিটির প্রতিবেদন নথিতে সংরক্ষণ; ফ্রান্সের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ; আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পরবর্তী সভা আহ্বান। একই বিষয়ে গত রবিবারও এক ভার্চুয়াল বৈঠক হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচক কর্মকর্তাদের মধ্যে।
বিমান মন্ত্রণালয় ও বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে এখনো আইএলএস ক্যাটাগরি ১-এই রয়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে অত্যাধুনিক রাডার ও রাডার টাওয়ার স্থাপন করতে হবে। নতুন রাডার ক্রয়ের ফলে বেসামরিক বিমানের উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা আরও উন্নত হবে। এয়ারপোর্টের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে। রাডার ক্রয়ে বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডস ও রেকমন্ডেড প্র্যাকটিস বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স একসঙ্গে কাজ করবে। এতে আমরা এয়ার নেভিগেশনে সুবিধা পাব। রাডার সিস্টেম দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের টেরিটরি দিয়ে যত প্লেন যাবে, সবই এই রাডারের মধ্যে চলে আসবে। যে কোনো প্লেন বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকলে তা শনাক্ত হয়ে যাবে। তবে সবাইকে একটা নির্দিষ্ট ফি (প্রতিটি বিমানের জন্য কমপক্ষে ৫০০ ডলার) দিতে হবে।
বেবিচকের এয়ার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের সদস্য এয়ার কমোডর মো. আমিনুল ইসলাম গতকাল সোমবার আমাদের সময়কে বলেন, পুরনো রাডারটি সরিয়ে নতুন রাডার স্থাপনে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ বিষয়ে আগামী মাসেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে বিমানবন্দরে নতুন রাডারটি বসবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply