মায়ের মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করেন কামাল উদ্দিনের বাবা। ছেলের অভিযোগ, সৎমা হিসেবে বাবার ঘরে এসে আসমা বেগমকে তার বাবা, তাকে ও তার দুই ভাইকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। তাদের ঠিকমতো ঘরে থাকতে দিতেন না, খাবার দিতেন না। এতে ‘অতিষ্ঠ হয়ে’ অকটেন ঢেলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আর ওই আগুনে পুড়ে নিহত হন আসমা বেগম। কামাল নিজে ছাড়াও দগ্ধ হন আরও দুজন।
নোয়াখালীর সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের রামহরিতালুক গ্রামে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়। রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নেওয়ার পর আসমা বেগম (৩২) মারা যান। এদিকে ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শামীম হোসেন (১৯) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
সুধারাম মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) টমাস বড়ুয়া জানান, কামালের সঙ্গে তার সৎমা আসমার জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। সকালে ওই জায়গা জমির দলিলগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য অকটেন ক্রয় করে আনেন কামাল। পরে ঘরে এসে সেগুলোতে আগুন দিতে গিয়ে পুরো ঘরে আগুন লেগে কামালসহ বাকিরা দগ্ধ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনায় কামালের শ্যালক শামীমকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে ইসমাইল হোসেন বাবুলের ঘরে আগুন জ¦লতে দেখে স্থানীয় লোকজন। তারা ছুটে গিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ঘরে ভেতর আটকে পড়া আসমা বেগম, কামাল উদ্দিনকে উদ্ধার করে। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে মান্না, সুমন ও তারেক আহত হন। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা বলছে অগ্নিদগ্ধ কামাল উদ্দিনের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে সৎমা আসমা বেগমের বিরোধ ছিল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কামাল উদ্দিন বলেন, মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা আসমা বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে আসমা তার বাবা, তাকে ও তার দুই ভাইকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিল। তাদের ঠিকমতো ঘরে ঢুুকতে দিত না, খাবার দিত না। ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে সকালে তিনি নিজ কক্ষটি অকটেন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে গিয়ে নিজেও দগ্ধ হন। সকালে স্থানীয় খলিফারহাট বাজার থেকে একটি বোতলসহ অকটেন কিনে আনেন তিনি।
অগ্নিদগ্ধ আসমার বাবা আবুল কাশেম বলেন, তার মেয়ের সুখ সহ্য করতে না পেরে সৎছেলে কামাল আসমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে ঘরে রেখে অকটেন দিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিদগ্ধ ৫ জনের মধ্যে আসমার শরীরের প্রায় ৯০ ভাগ, কামালের ৩০ ভাগ ও তারেকের ১৫ ভাগ পুড়ে গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। অপর দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
Leave a Reply