২০০২ সালে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের অধীনে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়। এতে সভাপতি হিসেবে বশির আহমেদ আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাহাদত হোসেন নির্বাচিত হন। এক সময় নানা অপরাধ আর হত্যাসহ দেড় ডজন মামলার আসামি হয়ে সরকার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পান শাহাদত হোসেন। পালিয়ে যান ভারতে। তবে এরপর আর মিরপুর থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করতে পারেননি ছাত্রলীগের নগর ও কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতারা।
বিভিন্ন সময় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও শাহাদতের হুমকিধমকির কারণে আটকে যেত সব। তবে গত বৃহস্পতিবার মিরপুর থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় মিরপুর থানার আওতাধীন দুটি ওয়ার্ড কমিটিও। এর মাধ্যমে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের দীর্ঘ ১৮ বছরের অচলায়তন ভাঙল।
২০০২ থেকে ২০২০ সাল। পার হয়ে গেছে দীর্ঘ ১৮ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে কমিটিবিহীন ছিল রাজনীতিতে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ থানা মিরপুর। সর্বশেষ ২০০২ সালে গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ইশারাতেই চলত মিরপুর। এ দীর্ঘসময়ে ওই কমিটি বিলুপ্ত করার সাহসও দেখাননি বিগত মহানগর কমিটির নেতারা।
শাহাদত যখন মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, সে সময় অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন সাইফুল্লাহ সাইফুল ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইসহাক মিয়া। এরপর সাইফুল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। আর ইসহাক মিয়া বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। শাহাদতের সময়কালে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে থাকা বশির আহমেদ অসুস্থ দীর্ঘদিন ধরে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও অসুস্থতার কারণে তেমন সময় দিতে পারেন না। ছোটখাটো ব্যবসাবাণিজ্য করেই দিন কাটে তার।
দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে শাহাদত বিদেশে পলাতক। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা মনির উদ্দিন মনু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। এ মামলায় শাহাদতসহ সাতজনকে মৃত্যুদ- এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০০২ সালের ১০ মে কমিশনার সাইদুর রহমান নিউটন হত্যাকা-ের পর দেশ ছাড়েন শাহাদত।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে। পুলিশের খাতায় শাহাদত মোস্ট ওয়ানটেড হিসেবে তালিকাভুক্ত। যে কয়জন পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে সরকার পুরস্কার ঘোষণা করে, শাহাদত তাদের মধ্যে অন্যতম। সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে শাহাদত প্রথমে ভারতে আশ্রয় নেন। ভারতে তার স্থায়ী বসবাসের খবর পাওয়া গেলেও তিনি দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশেও নিয়মিত যাতায়াত করেন বলে জানা যায়। তার কাছে বিশ্বের একাধিক দেশের পাসপোর্টও রয়েছে।
এ দীর্ঘসময় শাহাদত নিজেকে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বিদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন পুরো এলাকা। যদিও ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের নির্দেশে ওই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরে আবার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারও করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় মিরপুর থানা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার চেষ্টা করা হলেও শাহাদতের হুমকিধমকির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয় স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের অন্তর্গত মিরপুর থানা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করতে আগামী এক বছরের জন্য মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সাব্বির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আল ইমরানকে দায়িত্ব দেওয়া হলো।
এ ছাড়া মিরপুর থানার আওতাধীন ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি পদে শরীফ হাসান, সহ-সভাপতি শাহরিয়ার বিপুল, সাধারণ সম্পাদক আলীম ফরাজি রনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম দুর্জয়ের নাম ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পদে আল-আমিন ইসলাম, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রাব্বি, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন শুভ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে সোহানুল ইসলাম সোহানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের কমিটি ছিল না। ফলে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগের পদবি ছাড়াই ছাত্ররাজনীতি ছাড়তে হয়েছে। তাই আমরা নতুন কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে নিয়মিত শিক্ষার্থী ও পরিচ্ছন্নদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিয়েছি।
Leave a Reply