দুই প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক ও গ্রিসে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে ২৪ জন নিহত হয়েছে। এ ভূমিকম্পে উভয় দেশের সাত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। দেশ দুটির যে দুই জায়গায় ভূমিকম্পটি প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে সেখানে বন্যারও সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার তুরস্কের ইজমির প্রদেশ ও গ্রিসের সামোস দ্বীপে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এএফএডি) বলেছে, শুক্রবার গ্রিনিচ সময় ১১টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট) আঘাত হানা ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬। আর মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭।
ভূমিকম্পে ইজমির শহরের কমপক্ষে ১৩টি ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের পরপরই সড়কে হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন। এতে তুরস্কের ২২ জন নিহত হয়েছেন। নিহত অপর দুজন গ্রিসের সামোস দ্বীপের। এতে শুধুমাত্র তুরস্কেরই অন্তত ৭০৯ জন নিহত হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইজমির শহরে ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে স্থানীয়রা তল্লাশি চালাচ্ছেন। সমুদ্রের উত্তাল গর্জনে ইজমির শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীতে ভবন ধসের স্থানগুলো থেকে ঘন সাদা রঙয়ের ধোয়া উড়ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় তুরস্কের ইস্তাম্বুল, ইজমির ও অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। গ্রিসেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু এক টুইটে বলেছেন, ইজমিরের বায়রাকলি এবং বোর্নোভা জেলায় অন্তত ছয়টি ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া এই ভূমিকম্পে উসাক, দেনিজলি, মনিসা, বালিকেসির, আয়দিন এবং মুগলা প্রদেশেও হালকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তুরস্কের পরিবেশ মন্ত্রী মুরাত কুরুম বলেছেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকজন নাগরিক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন।’ তিনটি ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।।
এদিকে, গ্রিসেরে সামোস দ্বীপের ডেপুটি মেয়র মিখাইলিস মিটসিওস স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটিকে বলেন, ‘দ্বীপের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় সেখানকার আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় চলে আসেন। কিছু কিছু বাড়ির প্রাচীর ভেঙে পড়েছে এবং কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সামোসের মেয়র গর্গস ডিওনিসিও বলেন, ‘এটা ছিল ধ্বংসযজ্ঞ। আমরা কখনই এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি।’
সামাসের বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে গ্রিসের বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা। ভূমিকম্পের পর পূর্ব সতর্কতা হিসেবে এই দ্বীপের প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গ্রিস এবং তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। দেশ দুটিতে প্রায়ই শক্তিশালী এবং মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১৭ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
তারপর ২০১১ সালে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভ্যান প্রদেশে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে ৬ শতাধিক মানুষ মারা যান। আর গ্রিসে ২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, যাতে দুজন নিহত হন।
Leave a Reply