এশিয়ায় বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘গণি’ আঘাত হেনেছে ফিলিপাইনে। রোববার স্থানীয় সময় ৪টা ৫০ মিনিটে ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে দেশটির কাতানদুয়ানেস দ্বীপে এটি আঘাত হানে। এতে ব্যাপক ভূমিধস হয়েছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ সামগ্রী ও উদ্ধার অভিযানে ব্যবহৃত যন্ত্রসামগ্রী পৌছানো হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে আগামী ১২ ঘণ্টায় লুজন ও কাতানদুয়ানেস দ্বীপে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতোমধ্যে ১০ লাখ মানুষকে বিপজ্জনক এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝড়টি দেশটির প্রধান দ্বীপ লুজন অতিক্রম করেছে। এখানেই রয়েছে দেশটির রাজধানী ম্যানিলা শহর।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স বিভাগের প্রধান রিকার্ডো জালাদ গতকাল শনিবার বলেন, ম্যানিলায় বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার নিচু বস্তি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছে। সক্রিয় দুই আগ্নেয়গিরি মায়োন ও টালের দিকেও নজর রাখছে কর্তৃপক্ষ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টাইফুন গণি আরও শক্তি সংগ্রহ করে একটানা বাতাসের গতি ও ঝড়ো হাওয়াসহ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার (ঘণ্টায় ১৪০ মাইল) থেকে ঘণ্টায় ৩১০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে। ঝড়ো হাওয়া ম্যানিলার দক্ষিণ দিয়ে লুজন অতিক্রম করে দক্ষিণ-চীন সাগরে দিকে প্রবাহিত হবে।
ফিলিপিন্সের আবহাওয়া ব্যুরো বলছে, বিকোল অঞ্চলের প্রদেশগুলোর ওপর দিয়ে ‘ধ্বংসাত্মক প্রবল ঝড়ো বাতাস ও প্রবল থেকে তীব্র বৃষ্টিপাত’ হচ্ছে। ম্যানিলার দক্ষিণে কেজন, লাগুনা ও বাতাঙ্গাসের কিছু অংশেও এর প্রভাব পড়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের আঘাতে ফিলিপাইনে ৬ হাজার লোক মারা গিয়েছিলো। এরপর ঘূর্ণিঝড় গণিই এশিয়ার সবথেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে দেশটি এমনিতেই বিপর্যস্ত। এরপর ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়টি দেশটিকে আরও নুইয়ে দিয়েছে। করোনা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটি।
দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৮০ হাজার করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন, ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দেশটির এক সিনেটর ক্রিস্টোফার গো বলেছেন, ‘আমরা একটি খারাপ সময় পার করছি। আবার এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের আক্রমণ শুরু হয়েছে।’ দেশটির প্রতিরক্ষা প্রধান রিকার্ডো জালাদ বলেন, ‘বাইকল এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র অ্যালেক্সিস নাজ বলেন, ৩ লাখ ১৬ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড় মোলাভে আঘাত হানে। এতে ২২ জনের মৃত্যু হয়। গ্রাম ও ফসলের খেত প্লাবিত হয়। একই এলাকায় আবার ঘূর্ণিঝড় গণি আঘাত হেনেছে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, দক্ষিণাঞ্চলের লুজোন এলাকা ও সাউথ চায়না সাগরে ঢোকার পর আজ বিকেলে বা আগামীকাল সোমবার সকালের দিকে গোনি দুর্বল হতে পারে। স্থানীয় কর্মকর্তারা, বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত এবং জেলেদের মাছ শিকারে যেতে নিষিদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে এয়ারলাইন্সের ডজনখানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
Leave a Reply