নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে তীব্র শীতে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক শিশুকে ভর্তি করা হচ্ছে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ও জেনারেল হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে। এছাড়াও হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে এক সপ্তাহ ধরে শেবাচিম গড়ে ১০/১৫ জন শিশু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শিশুদের তিনটি ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিকের বেশী শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।
এরমধ্যে প্রায় ১০ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তবরত চিকিৎসকরা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ব্যাপারে চিকিৎসকরা বেশী সর্তকতা অবলম্বন করছেন। আক্রান্ত শিশুদের বয়স ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে। শেবাচিম হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এম.আর তালুকাদার মুজিব জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে একটু শীতের অবহাওয়া পড়ায় শিশুদের মধ্যে জ¦র, ঠান্ডায় আক্রান্ত দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা ঘণ ঘণ শ্বাস নেয়। জ্বরের সঙ্গে খাবারে অরুচি এবং পালস্ বেড়ে যায়।
এ সব শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে কোন সমস্যা হয় না। তিনি আরো বলেন করোনার মধ্যে শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। চিকিৎসা নিয়ে বিলম্ব করলে বিপদের আশংকা থাকে। শেবাচিমের বহিঃ বিভাগের শিশু বিশেজ্ঞ ডা.ফয়সাল জানান, বিশ^ জুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তার মধ্যে আসছে শীত। করোনার ভাইরাসের ক্ষতির দিক হলো ঠান্ডা। তবে করোনা ভাইরাস ছাড়াও শীতকালে শিশুরা বেশী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে বর্তমানে আমার কাছে প্রতিদিন ঠান্ডা জড়িত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০/৪০ শিশুকে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি আরো জানায়, গ্রাম আঞ্চলের মানুষ এখনও শিশুরা ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্টে ভূগতে শুরু করলে অনেক অভিবাবক তাদের চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে বুকে গরম তেল মালিশ করা ও নানান গাছপালার পাতার রস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। এতে শিশুরা আরো বেশী র্দূবল হয়ে পড়ে। রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। শিশু বিশেজ্ঞদের মতে ঠান্ডাজনিত যে কোন রোগে শিশু আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা প্রদান না করার পরামর্শ দেন। একই সাথে শীতকালে শিশুকে ঠান্ডা থেকে দূরে গরম কাপড়- চোপড় পরিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন। আবার গরম কাপড় অতিরিক্ত দিতে গিয়ে ঘামেও শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে বলে চিকিৎসকরা জানান। তাই এক বছর বয়সের নীচের শিশুদের শীতকালে খুবই যতœ সহকারে তত্বাবধান করা উচিৎ বলে এখানকার চিকিৎসকরা জানান।
এছাড়া বরিশাল সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু রোগী সংখ্যা একটু বেড়েছে বলে জানিয়েছে শিশু বিশেজ্ঞ। তাদের মধ্যেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকা থেকে আসা ১বছরের শিশু ফাহিমা আক্তারের মা শেলি বেগম বলেন, শীতে ঠান্ডা লেগে মেয়ের সর্দি-কাশি দেখা দেয়। তার সঙ্গে জ্বর। মেয়ের জ্বর বেড়েই যাচ্ছে। তাই মেডিকেলে ভর্তি করেছি চিকিৎসার জন্য। ডাক্তাররা বলেছে নিউমোনিয়া লক্ষ হতে পারে তবে পরীক্ষা গুলো করেন আসেন তার পরে বলা যাকে সঠিক রোগের কথা। হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক এম আর তালুকদার মুজিব বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা-কাশি-জ্বর হতেই পারে। সামান্য সমস্যাতেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হালকা জ্বর, কাশি বা নাক থেকে পানি ঝরা সমস্যায় মধু-পানি, লেবু-পানি, আদা বা তুলসী পাতার রস দেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এ সময় ভাইরাসজনিত রোগ ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। কাশির জন্য বাড়িতে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া গেলেও শ্বাসকষ্ট উপশমে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। কখনো এ ধরনের সমস্যায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো ঠিক নয়।
Leave a Reply