হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী- এমন দাবি করেছেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারীরা। এমনকি আল্লামা শফীর মৃত্যুর জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আল্লামা শফীর শ্যালক মঈনুদ্দিন এসব দাবি জানান।
জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগ আনা হলো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নতুন আমির-মহাসচিব নির্বাচনে কাউন্সিলের ঠিক আগের দিন। আজ রবিবার হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, আল্লামা শফীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করা এবং জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা মামুনুল হক ও হারুন ইজহারের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে
জামায়াত নেতারা ভূমিকা রাখছেন। এই পরিস্থিতিতে কওমি সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা- তবে কি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম? হেফাজতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে বাবুনগরী ও মাওলানা মামুনুল হকের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে পোস্টার লাগানো হয়েছে। এসব পোস্টারে লেখা হয়েছে- ‘জামায়াতের সাথে হেফাজতের সেতুবন্ধনের চেষ্টা করছে মামুনুল হক, এ কীসের ইঙ্গিত?’, ‘হেফাজতের কমিটি তৈরিতে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা!’, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসার মানবতাবিরোধী সাজাপ্রাপ্ত সাইদীপুত্র শামীম সাঈদীর আনাগোনা, কিসের আলামত?’
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহী অভিযোগ করে বলেন, কাউন্সিল আহ্বানকারীদের গতিবিধি অনুসরণ করে বোঝা গেছে, জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। কিছুসংখ্যক উচ্চাভিলাষী নেতা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা হেফাজতের অজ্ঞাতে যে কোনো কর্মসূচিতে ঢুকে পড়তে পারে। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক বিরোধ দীর্ঘদিনের।
হাটহাজারী মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের কাউন্সিল ও আমির নির্বাচন নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। এদিকে প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি নেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়াসহ অভ্যন্তরীণ বিরোধে দুই বছর আগে হেফাজতের নায়েবে আমির পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। জামায়াতপন্থি হিসেবে সমালোচিত বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির পদে বসাতে মুহিবুল্লাকে সভাপতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ আল্লামা শফীপন্থিদের।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানিয়েছেন, আজ রবিবার সকাল ১০টায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় সম্মেলন শুরু হবে। সারাদেশ থেকে আসা পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন শূরা কমিটি এবং হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব।
শফীপুত্র আনাস মাদানিসহ আহমদ শফীর অনুসারীদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি জানিয়ে মঈনুদ্দিন বলেন, সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে পাঁচজন, ৩৫ নায়েবে আমিরের মধ্যে ২৩ জনকে সম্মেলনে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। একটি গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং পকেট কমিটি করতে হেফাজতের পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে কাউন্সিল ডাকা হয়েছে।
আল্লামা শফী হত্যায় জামায়াত-শিবির : এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা শাহ আহমদ শফী জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মঈনুদ্দিন। শফীর পরিবারের পক্ষ থেকে ‘হত্যাকা-ের’ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউন্সিল না করার দাবি জানান মঈনুদ্দিন।
Leave a Reply