যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এবার আরো অনেক কিছুর মতো নতুন ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন জিল বাইডেন। তিনি হোয়াইট হাউজে আসা প্রথম ফার্স্ট লেডি হতে যাচ্ছেন যিনি একজন চাকরিজীবী।
নতুন ফার্স্ট লেডি সম্পর্কে কতটা কী জানা যাচ্ছে?
পুরো জীবন ধরে শিক্ষিকা
নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার একটি কম্যুনিটি কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক হিসাবে তিনি তার শিক্ষকতা পেশা ধরে রাখবেন। সেখানে তাকে একজন কঠোর শিক্ষক হিসাবেই জানেন তার ছাত্র-ছাত্রীরা।
সিবিএস টেলিভিশনকে গত অগাস্ট মাসে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ”এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমি চাই মানুষ শিক্ষকদের মূল্যায়ন করুক এবং তাদের অবদান সম্পর্কে জানুন, তাদের মর্যাদা দিক।”
ডক্টরেট ডিগ্রি থাকায় তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৩১ বছরের ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের প্রথম সর্বোচ্চ শিক্ষিত অর্ধাঙ্গিনী। ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ার থেকে ২০০৭ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি কম্যুনিটি কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার বিষয়ে মনোযোগ দেন।
পুরো জীবন ধরে শিক্ষকতা করে আসা জিল বাইডেনের দুইটি মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে। ইংরেজি ও পড়াশোনার ওপরে।
স্বামীর রক্ষক
অধ্যাপক জিল বাইডেনের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। তিনি তার স্বামীর একজন রক্ষক। সমাবেশে বাধা সৃষ্টিকারীদের ঠেকানো এবং বাইরে বের করে দেয়ার কাজে স্বেচ্ছাসেবীদের তিনি সহায়তা করেছেন।
তবে এখন থেকে সম্ভবত এসব দায়িত্ব সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরাই গ্রহণ করবে।
হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তন
হোয়াইট হাউজে অধ্যাপক জিল বাইডেনের এবারই প্রথম আসা হচ্ছে না। কারণ বারাক ওবামার পুরো মেয়াদ জুড়ে তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড লেডি। সেই সময়েও তিনি তার শিক্ষকতা পেশা অব্যাহত রেখেছিলেন।
সেকেন্ড লেডি হওয়ার পর সর্বশেষ যিনি ফার্স্ট লেডি হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের স্ত্রী বারবারা বুশ, ১৯৮৯-১৯৯৩ সালে।
সেকেন্ড লেডি হিসাবে দ্বিতীয় দফার দায়িত্ব পালনের সময় নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, স্তন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা, শিক্ষা ও কম্যুনিটি কলেজের গুরুত্ব তুলে ধরা আর সামরিক বাহিনীর পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজ করেছেন।
জো আর জিলের পরিচয় কীভাবে?
কলেজ জীবনের প্রেমিকা, প্রথম স্ত্রী নেইলিয়া এবং তাদের মেয়েকে ১৯৭২ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় হারান জো বাইডেন।
তিন বছর পরে তার সঙ্গে পরিচয় হয় জিল জ্যাকবসের।
সেই সময় জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, আর জিল ছিলেন কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। দুইজনেরই আগে একবার বিয়ে হয়েছিল।
স্মৃতিচারণায় ২০০৭ সালে জো বাইডেন লিখেছিলেন, ”সে আবার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। আবার নতুন করে পরিবার শুরু করার ব্যাপারে তিনি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিলেন।”
জিল বাইডেন ভোগ ম্যাগাজিনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ”তাদের প্রথম ডেটিংয়ের সময় (একটি সিনেমা দেখতে যাওয়া) জো বাইডেন একটি স্পোর্ট কোট আর লোফার জুতা পড়ে এসেছিলেন।”
”আমি ভেবেছিলাম, হায় ঈশ্বর, এখানে কোন কিছু হবে না, কোন দিন এখানে সম্পর্ক হবে না। তিনি ছিলেন আমার চেয়ে নয় বছরের বড়ো।”
কিন্তু এরপরে এই যুগলের সম্পর্কটা যেন তৈরি হয়ে যায়। সেই রাতের শেষে বিদায়ের সময় জিলের সঙ্গে করমর্দন করে বিদায় নেন জো বাইডেন।
মধ্যরাতে মাকে ফোন করে জিল বলেন, ”মা, আমি অবশেষে একজন ভদ্রলোককে খুঁজে পেয়েছি।”
তবে এরপরেও বিয়েতে জিলের সম্মতি পেতে জো বাইডেনকে অন্তত পাঁচ দফা চেষ্টা করতে হয়েছে।
জিল বাইডেন বলছেন, তিনি প্রতিবারই বলেছেন, ‘এখনি নয়’ কারণ তিনি শতভাগ নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যেন বিয়েটা বাইডেনের দুই ছেলে, হান্টার আর বেয়াউর জন্য সঠিক হয়।
বাইডেন রসিকতা করে বলেন, সম্মতি দেয়ার জন্য ভবিষ্যৎ স্ত্রীকে তিনি হুমকি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
১৯৭৭ সালের জুন মাসে নিউ ইয়র্কে ইউনাইটেড ন্যাশনস চ্যাপেলে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে জো বাইডেনের দুই ছেলেই উপস্থিত ছিল। এরপর পুরো পরিবার মিলে হানিমুনে যায়।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply