নানা প্রশ্ন রায়হানের মা সালমা বেগমের। কেন খুন করা হলো রায়হানকে, ধরলো কোথায়, আর আকবরকে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী সিনিয়র কর্মকর্তাই বা কে? এসব প্রশ্ন তুলে বলেন, রায়হানকে কারা খুন করেছে, আলামত নষ্টের সঙ্গে কারা জড়িত- এ প্রশ্নেরও সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। আর এসব প্রশ্ন আকবরের মুখ থেকেই বের করতে হবে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইকেই। এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে না পারলে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১
করেন। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরীর আখালিয়া নেহারীপাড়াস্থ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রশ্ন রাখেন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হানের মা। রায়হান হত্যার একমাস পূর্তি ও বরখাস্ত হওয়া এস আই আকবর গ্রেপ্তার হওয়ায় আনুষ্ঠানিক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আখালিয়া বার হামছায়াবাসী। এতে দীর্ঘ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন এলাকার সামাজিক নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের মা সালমা বেগম জানান- ‘আশেক এলাহী, আকবরকে ধরে আনা হয়েছে।
এখনো তারা মুখ খুলছে না এবং কেন্ খুলছে না তাও আমি জানি না। আমার ছেলেকে কেনো তারা ধরেছে, তার সঙ্গে কী বিরোধ ছিল, হত্যাকাণ্ডে কারা কারা ছিল- সেটি পিবিআই তদন্ত করে বের করুক। আমার ছেলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পরেছিল ব্লু-কালারের কাপড়। মৃত্যুকালে তার পরনে ছিল লাল চেকের শার্ট ও প্যান্ট অন্য। এমনটা কিভাবে হলো? আমি সেটা জানতে পারবো না। কারণ, আমার ঘর থেকে যখন বেরিয়ে যায় তখন তার পরনে ছিল নেভি ব্লু গেঞ্জি এবং নেভি ব্লু প্যান্ট। মৃত্যুকালে তার পরনে ছিল এমন একটি শার্ট, সেটি তার গা পুরোপুরি ঢাকেনি। এতো ছোটো শার্ট, লাল কালারের শার্ট। রায়হানের শার্ট, মোবাইল কোনো কিছু এখনো পাইনি।’ এদিকে, লিখিত বক্তব্যে আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মখলিসুর রহমান কামরান বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। সেটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পিবিআই’র প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই। কারণ পিবিআই আমাদের জানিয়েছে- মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আর যদি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত না হয় তাহলে আবারো দেশবাসীকে নিয়ে আন্দোলন করবো।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটের ইতিহাসে জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যদি কোনো প্রকার শৈথিল্য বা অবহেলা থাকে তাহলে সিলেটবাসী কাউকে ক্ষমা করবে না।’ রায়হান হত্যা মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন- ‘সিলেটবাসী ন্যায়বিচারের আশায় আপনাদের দিকে চেয়ে আছে। মামলার তদন্তে গাফিলতি হলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। পূণ্যভূমি সিলেট হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহপরাণ (র.) ও ৩৬০ আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্য পবিত্র এই মাটিতে অপরাধ করে অতীতে কেউ-ই পার পায়নি। রায়হান হত্যাকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সিলেটের পবিত্র মাটিতে হবেই হবে। রায়হান হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বৃহত্তর আখালিয়ার বারো হামছায়াবাসীসহ সিলেটের মানুষ আন্দোলনে থাকবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।’ রায়হান হত্যার পর আন্দোলনে শীর্ষ নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বারের সাবেক পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি প্রথমেই সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদউদ্দিনকে ধন্যবাদ জানান। বলেন- ‘পলাতক থাকা আকবরকে ভারত থেকে গ্রেপ্তার করে আনেন। সেখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। তার দূরদর্শিতার কারণে আকবর গ্রেপ্তার হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও কৌশলগত কারণে তিনি অনেক কিছুই বলতে পারেন না। ফলে এই অভিযান সম্পর্কে তিনি সবকিছু জানাতে পারেননি। তবে রায়হানকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশ সুপারকে আখালিয়া বারো হামছায়াবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।’ মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন- ‘রায়হান হত্যা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যেহেতু পলাতক থাকা এস আই আকবর গ্রেপ্তার হয়েছে সেহেতু পিবিআই এখন তার মুখ থেকে প্রকৃত তথ্য জানবে। এর আগে আরো তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এছাড়া ঘটনার দিন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে থাকা তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছে। সুতরাং মামলার সাক্ষ্যতেও কোনো ঘাটতি নেই। চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি বিচারে যাবে। আশা করা যাচ্ছে- আদালতে আইনি লড়াইয়েও আমরা রায়হানের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে পারবো।’
Leave a Reply