বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিম চৌধুরী মিলনের বাড়িতে বিদ্রোহী প্রার্থী রুমা বেগমের অনুসারীরা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশের একটি দল সেখানে গেলে হামলাকারীরা এক সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভূত করে দিয়েছে।
গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার নব-গঠিত দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সুলতানী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এএসআই ইন্দ্রজিৎ এর বরাত দিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মমিন উদ্দিন জানান, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে একদল হামলাকারী পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিম চৌধুরী মিলন বলেন, ‘রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র দাখিল করে এলাকায় ফিরে রাতে আমার বসতবাড়িতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠকে বসি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী রুমা বেগমের অনুসারী দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক লিটন সরদার, পাশ্ববর্তী গোবিন্দপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক সরদার, উলানিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি চুন্নু সরদার, সাধারণ সম্পাদক রাকিব সরদার ও যুবলীগ নেতা মোশাররফের নেতৃত্বে প্রায় ৩০/৪০টি মোটরসাইকেল যোগে শতাধিক লোকজন দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, হকস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে সভাস্থলে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা বসতঘরসহ বাড়ির অন্যান্য ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।’
হামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অনুসারী আব্দুল মালেক রাড়ী (৪৭), মো. নাছির উদ্দিন চুন্নু (৩০), মোক্তার হোসেন (৪৪), সাইদ (২২), সুমন (২৫), পল্লব (৩০), মো. আবু তাহের (২৬), আব্দুল বাকের (২৪), আ. জাহের (৩২) ও জহিরুল ইসলাম (৩৫) সহ প্রায় ২০ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাই রিপন চৌধুরী।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রুমা বেগম। তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা আমার লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করেছে।’
এদিকে, চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা আশপাশের বাগানে গিয়ে আত্মগোপন করে। এ সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলনের বাড়ির সামনে এএসআই ইন্দ্রজিৎ তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সড়কের ওপর রেখে প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলতে যান। এই ফাঁকে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনেকই মনোনয়ন চেয়েছেন। দল যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে দলের প্রার্থীর বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা সমর্থনযোগ্য নয়। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা করে এই বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা-ভাঙচুরের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে।
এসপি বলেন, হামলাকারী এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের চিহিৃত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে গোটা এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Leave a Reply