দখিনের খবর ডেক্স ॥ ঈদুল ফিতরে সড়ক-মহাসড়কে ২৭৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৩৯ জন। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৬৫ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক, রেল ও নৌপথ পর্যবেক্ষণ করে দুর্ঘটনার এ তথ্য দিয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ঈদের আগে যাত্রাপথে সব তদারকি সংস্থার সক্রিয় অবস্থানের কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছিল। কিন্তু ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে তদারকি না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা পর্যন্ত অর্থাৎ ২৩ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত আর নয়জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ৫৫ জন। এ ছাড়া রেলপথে ট্রেনে কাঁটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় চারজন ও ট্রেনের ছাঁদ থেকে পড়ে দুইজনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। সংগঠিত দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২ দশমিক ২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ অটোরিকশা ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল এবং ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ অন্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। যাত্রী কল্যাণ সমিতি তাদের পর্যবেক্ষণে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীন/বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো। এছাড়া মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা ও সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সংগঠনটি দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। এগুলো হলো-সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা, নিয়মিত রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেইনের ব্যবস্থা করা, মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন করা। এছাড়া ভাঙা রাস্তাঘাট মেরামত, ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাত, আন্ডারপাস, ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথাও বলছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জোতিৎময় বড়ুয়া, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply