নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ট্রান্স ফ্যাট চর্বির একটি প্রাথমিক উৎস। এতে রক্তে মন্দ কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ে, যা হৃদরোগজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া ট্রান্স ফ্যাট টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেকোনো খাবারে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ পর্যন্ত সীমিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতিবাচক পদক্ষেপ গৃহীত হলেও বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে। এক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন ও সরকারের ইতিবাচক মনোভাব প্রয়োজন বলে মনে করেন ক্যাব, প্রজ্ঞা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন । তাদের মতে, উচ্চমাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণে সার্বিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। জানা গেছে, বাংলাদেশে শিল্পোৎপাদিত কোনো মোড়কজাত খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় না। তবে সম্প্রতি ঢাকার স্থানীয় বাজারে দৈবচয়নের মাধ্যমে সংগৃহিত ১২ ধরনের বেকারি বিস্কুটি নিয়ে এক গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় বিস্কুটগুলোতে ৫ থেকে ৩৯ শতাংশ ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণার ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেশি। ট্রান্স ফ্যাট এক প্রকার হাইড্রোজেনেটেড অয়েল। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রায় দাহ্য তেল বা চর্বিও ট্রান্স ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। সিঙ্গাড়া, সমুচা, পুরি, বিস্কুট, চানাচুর, চিপসের মতো বেকারি পণ্য যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে সেগুলো তৈরিতে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অনেক স্ট্রিট ফুড যেগুলো কড়া করে ভাজা হয় সেগুলোতেও ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এছাড়া রান্নার কাজে একই তেল বারবার ব্যবহার করলেও তাতে ট্রান্স ফ্যাট উৎপাদিত হয়। ২০০৩ সালে ডেনমার্ক বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আইন করে এর সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে। অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ইরান, ভারতসহ ২৮টি দেশে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছে। ফলে এসব দেশে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া আরও ২৪টি দেশ খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ বাধ্যতামূলক করেছে।
এমনকি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও কানাডা ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস ‘পিএইচও’ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সোমবার বরিশালে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট, হৃদরোগ ঝুঁকি এবং করনীয় : ভোক্তা পরিপ্রেক্ষিত বিষয়ক বিভাগীয় সেমিনারে এই তথ্য উঠে আসে। বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার এর উপ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, বিএসটিআই বরিশালের উপ পরিচালক শফিউল্লাহ খান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরিশালের সহকারী পরিচালক মো. শাহ সোহেব মিয়া। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ক্যাবের প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর খন্দকার তৌফিক আল হোসাইনী ও প্রজ্ঞার প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মাহমুদ আল ইসলাম শিহাব। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাব বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রনিজৎ দত্ত।
Leave a Reply