বহুল আলোচিত মৈত্রী রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রথম ইউনিট উৎপাদনে নিয়ে আসতে চায় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল)। সেই লক্ষ্যে দক্ষ প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অবিরাম। এরই মধ্যে ৫৫ শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। আর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেষ জৈইন।
বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মূল প্ল্যান্টের পশ্চিম পাশে পশুর নদীতে জেটির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ চিমনির কাজটিও প্রায় শেষের দিকে। ২৭৫ মিটার উচ্চতার এই পুরো কাজটি শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির কাজ আবারও পুরোদমে শুরু হয়।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০তম বছরকে লক্ষ্য ধরেই এগিয়ে চলেছে দুই দেশের মালিকানাধীন প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি। বিভিন্ন কাজে এরই মধ্যে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে নির্মাণ করা হচ্ছে দুটি গ্রিড লাইন- একটি খুলনা ২৩০ কেভির, অন্যটি ঢাকা ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তাদের গ্রিড লাইন বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে উৎপাদনে আসবে।
পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা অবশ্য এই সময়ের মধ্যে গ্রিড লাইন নির্মাণ শেষ করার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পিজিসিবির অনেকগুলো গ্রিড লাইনের নির্মাণকাজ চলমান। তাই রামপাল কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দিতে যে লাইন নির্মাণ করতে হবে, সেটা ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করা কঠিন হতে পারে।’
এদিকে প্রকল্পটির কেবল অবকাঠামো ও কারিগরি কাজই নয়, ভবিষ্যতে পরিচালনার জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিআইএফপিসিএল। গত মঙ্গলবার দুপুরে ৪৭ প্রকৌশলীর কাজে যোগদান পর্বের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া এই প্রকৌশলীদের প্রায় চার মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই লক্ষ্য সামনে রেখে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিটবিশিষ্ট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টটির প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের শেষ দিকেই উপাদনে যাবে। দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে ২০২২ সালের প্রথম দিকে।’
পিডিবির চেয়াম্যান বলেন, ‘পরিবেশগত সব আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্লান্টে ব্যবহার করা হবে আমদানি করা উন্নত মানের কয়লা। আল্ট্রাসুপার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প কয়লা ব্যবহার করে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।’ বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ খাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। প্রায় ১১ বছরে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। আর বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ছাড়িয়েছে ২০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।’
বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেষ জৈইন বলেন, ‘নবনিযুক্ত তরুণ প্রকৌশলীদের কর্মকা-ে প্ল্যান্টে আরও গতি আসবে। প্রথমত তাদের রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টে এক মাস ক্লাসরুম এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২০২১ সালের শুরুতে এদের ভারতের নয়াদিল্লির নিকটবর্তী এনটিপিসির প্রিমিয়ার পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে তিন মাসের প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। এরাই মূলত বিদ্যুতের কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত থাকবেন এবং প্ল্যান্ট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের ১ হাজার ২০০-এর বেশি দক্ষ শ্রমিক ফিরে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে প্ল্যান্টে বাংলাদেশিসহ মোট সাত হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রামপাল প্রকল্পে প্রথম ইউনিট এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
Leave a Reply