কাজী সাঈদ ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে ছয় জন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষিত হয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিত্তশালী বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার। সরোয়ারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর তেমন কোনো সম্পদ নেই। আর সবচেয়ে কম সম্পদ বাসদের মনীষা চক্রবর্তীর।
মেয়র পদে বৈধ ঘোষিত ছয় প্রার্থীর মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধেই আছে হত্যা, দুর্ণীতি ও হামলা-ভাঙচুর এবং প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলা। প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা বিএনপির সরোয়ারের বিরুদ্ধে। পাঁচ বারের সংসদ সদস্য ও বরিশালের সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে বিচার চলছে ১৩ মামলায়। এমএ এলএলবি পাস সরোয়ারের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছে হত্যা, দুর্নীতি, আয়কর ফাঁকিসহ নানা অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা ছিল। সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। সরোয়ারের বার্ষিক আয় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা। এছাড়া নগদ অর্থ রয়েছে ১০ লাখ। শেয়ার বন্ডসহ এসব খাতে তার জমা টাকার পরিমাণ ৮৫ লাখ টাকা। মোট ৪.৬৩ একর জমি রয়েছে সাবেক মেয়রের। এর দাম ১৬ লাখ ৯ হাজার ৪২৬ টাকা। এছাড়া তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি টিনসেড ঘরের মালিক তিনি। এসবের মূল্য দেখিয়েছেন তিন কোটি ১৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। কোথাও কোনো দায়দেনা বা ঋণ নেই সরোয়ারের। দুইটি প্রাইভেট কার, একটি জিপ রয়েছে বিএনপির প্রার্থী সরোয়ারের। হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী এসব গাড়ির দাম ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৫০ তোলা স্বর্ণ এবং প্রায় ১৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার। তিনটি লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে সরোয়ারের। এর একটি রিভলবার এবং দুটি রাইফেল। আওয়ামী লীগের সাদিক আব্দুল্লাহ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। শিক্ষকতা যোগ্যতা হিসেবে তিনি নিজেকে স্ব-শিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। সাদিকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, কখনও ছিলও না। বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা এবং বেতন বাবদ বছরে তার মোট আয় ছয় লাখ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা। নগদ জমার পরিমাণ ছয় লাখ ৮১ হাজার টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র আছে দুই লাখ টাকার। রি-কন্ডিশনড একটি মাইক্রোবাস আছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। তবে রাজউকের গড়ে তোলা আবাসিক এলাকা পূর্বাঞ্চলে একটি আবাসিক প্লট এবং ঢাকার নিকেতনে একটি ফ্ল্যাটের মালিক সাদিক। দায়দেনা বা কোনো ঋণ নেই মহানগর আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের। নেই কোনো আগ্নেয়াস্ত্রও। বাসদের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী পেশায় একজন চিকিৎসক। দুইটি মামলার আসামি এই রাজনীতিক বার্ষিক কোনো আয় দেখাননি। নগদ জমা আছে দেড় লাখ টাকা। ব্যাংকে মনীষার জমা আছে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। কোনো জমি নেই, নেই ব্যাংক ঋণ বা দায় দেনা। তবে পারিবারিকভাবে থাকা পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের একজন অংশীদার তিনি। অর্ধেক ভাগে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯০০ টাকার আরও একটি সঞ্চয়পত্র আছে তার। সিপিবির আবুল কালাম আজাদ আইন পেশায় বছরে আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার নগদ জমা আছে ১১ লাখ ২০ হাজার। সাত ভরি স্বর্ণের মালিক আজাদের কোনো দায়দেনা বা ঋণ নেই, নেই জমিজমাও। চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহবুব মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তার বার্ষিক আয় দুই লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। কোনো মামলা নেই মাহবুবের নামে। তিনি একটি বন্দুকের মালিক। একটি গাড়ি, দুইটি ফ্রিজ, আট তোলা স্বর্ণ, ছয় শতাংশ অকৃষি জমি ও একটি টিনসেড ঘর আছে এই মেয়র প্রার্থীর। কোনো দায়দেনা বা ঋণ নেই তার। ধর্মভিত্তিক দল খেলাফত মজলিসের প্রার্থী একেএম মাহবুব আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স পাস। চার লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা বার্ষিক আয় থাকা এই নেতার নগদ জমা অর্থের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫০ টাকা। আট ভরি স্বর্ণ এবং একটি ল্যাপটপ আছে তার। ১.৩৮ একর জমির পাশাপাশি আধাপাকা একটি টিনশেড ঘর আছে তার। তারও কোনো ঋণ নেই। কোন মামলা নেই মাহবুব আলমের বিরুদ্ধেও।
Leave a Reply