কাজী সাঈদ ॥ বরিশাল অঞ্চলে কেউ শিল্প-কারখানা করার উদ্যোগ নিলে প্রশিক্ষণ এবং ব্যাংক ঋণ থেকে শুরু করে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনে বিদ্যমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের গৃহিত নানামুখি পদক্ষেপের ফলে বরিশাল অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পর্যটনসহ উদীয়মান বিভিন্ন শিল্পখাতে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর সুবিধা এ সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করেছে। এখান থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহনও সুবিধাজনক। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সহজলভ্য। সার্বিক বিবেচনায় বরিশাল অঞ্চল শিল্পায়নের জন্য উৎকৃষ্ট জনপদ। বরিশালের সাহসী জনগণের শ্রম, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উদ্যোগ, সুশীল সমাজের মেধা এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এক সঙ্গে কাজে লাগিয়ে অচিরেই দক্ষিণাঞ্চল দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেল’র উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ‘বরিশাল অঞ্চলে শিল্প-শিক্ষাবিদ জোট’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি এসব কথা বলেন।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন- ঐতিহ্যগতভাবে বরিশাল অঞ্চল বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ জনপদ। বরিশাল জেলা ধান, মাছ ও কৃষি পণ্যে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি ভোলা জেলা গ্যাস, ব্লাক ডায়মন্ড ও পটুয়াখালী জেলা পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধ। ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ বিভাগের জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ কৃষি ও কৃষিভিত্তিক পেশার সঙ্গে জড়িত। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণেও বরিশাল বিভাগ এগিয়ে রয়েছে। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদিত হয় বরিশাল বিভাগে। ইলিশের উৎপাদন বিবেচনা করে বরিশালে হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চল চামড়া, হস্ত ও কারু বহুমুখীকরণ ও মূল্য সংযোজনের চমৎকার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বরিশাল অঞ্চলে জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা এগিয়ে নিতে এ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক এর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিল্প মন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুব হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিসের পরিচালক প্রফেসর মিজানুর রহমান। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেলের পরিচালক ও কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক এর সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট জনাব রাহাত হোসাইন ফয়সাল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) গোলাম রউফ খান এবং বেঙ্গল বিস্কুট কোম্পানির ম্যানেজার আবদুর রহমান। সেমিনারে বক্তারা “ওহফঁংঃৎু অপধফবসরধ অষষরধহপব রহ ঃযব এৎবধঃবৎ ইধৎরংধষ জবমরড়হ” এর নানা দিকসহ একাডেমিসিয়ান ও শিল্পদ্যোক্তাদের মধ্যে পারস্পারিক সমন্বয় সাধণপূর্বক বরিশালের শিল্পোন্নয়নের বিবিধ বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, চেয়ারম্যানবৃন্দ, প্রক্টর, প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষকমন্ডলী, পরিচালকবৃন্দ, অফিস প্রধানগণ, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদেরকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান উপাচার্য। উপাচার্য ফুলেল শুভেচ্ছার পরপরই প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে সম্মাননা জানান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স এসোসিয়েশন, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনি কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply