রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের ৫ সদস্যের বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন
বিদেশী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়

বিদেশী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়

একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর রাতের মধ্য প্রহরে জেনারেল নিয়াজি যখন তার চিফ অব স্টাফের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছেন, পশ্চিম গোলার্ধে তখন দিন। ক্যালেন্ডারের তারিখ তখন ১৫। নিরাপত্তা পরিষদে তখন ঝড় বইছে। তৃতীয়বারের মতো ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবে এই ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ। যাতে ভারত তার মিশন সম্পন্ন করার জন্য সময় পায়।

এদিকে, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষ হয়ে যখন নিউইর্য়কে সন্ধ্যা নামে, তখন পূর্ব গোলার্ধে ঢাকায় অন্ধকার সরিয়ে সূর্য চোখ মেলতে থাকে। ক্যালেন্ডারে তারিখের ঘরে ১৬ পড়ে গেছে ঘণ্টা পাঁচেক আগে। এক ভয়ঙ্কর স্তব্ধতা যেন গ্রাস করেছে সারা শহরকে। দূরে কোথাও লড়াই চলছে। আতঙ্কপীড়িত মানুষ প্রহর গুণছে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ভারত-বাংলাদেশ বাহিনীর সম্মিলিত আঘাতের অপেক্ষায় ।

সাংবাদিক মাসুদুল হকের ‘বাঙালি হত্যা এবং পাকিস্তানের ভাঙন’ বইতে এরকম বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, সেই অপেক্ষা দির্ঘায়িত হয়নি। এদিনই পৃথিবীর মানচিত্রের বুক চিরে উঠে আসে এক নতুন দেশ- নাম তার বাংলাদেশ। এই বিজয়ে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে জয় বাংলা স্লোগানে। ঢাকার পতন আর জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের খবর পরের দিন দেশি এবং বিদেশী গণাধ্যমে স্থান করে নেয়।

মার্কিন দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’ ১৬ ডিসেম্বরের ডেট লাইনে প্রকাশিত লি লেসকেজের লেখা এরকম একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ শেষ : উল্লাস আর পুষ্প সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ভারতীয় বাহিনীর ঢাকায় প্রবেশ।’

প্রতিবেদনে তিনি লেখেন, হাজার হাজার বাঙালির উল্লাস আর ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনারা আজ ঢাকায় প্রবেশ করে। মেজর জেনারেল গন্ধর্ভ নাগরার অধিনায়কত্বে ভারতীয় সৈন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানি (বাংলাদেশ) গেরিলাদের মিলিত বাহিনী অতি প্রত্যূষে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি সেতুর উপর আঘাতহানে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে এখানকর পাকিস্তানি কমান্ড জানায়, তারা আত্মসমর্পণের ভারতীয় চুড়ান্ত শর্ত মেনে নিয়েছে।
নাগরা বলেন, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে তিনি শহরের ভেতর পাকিস্তানি সামরিক সদরদফতরে একটি চিরকুট পাঠান এবং তৎক্ষণাৎ উত্তর পান যে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ থাকবে না। তারপরেই তিনি সঙ্গীদের নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। প্রায় সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনাপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজির সাথে তিনি মিলিত হন। নাগরা বলেন, ‘আমরা কলেজ জীবনের পুরোনো বন্ধু।’

এরপর ভারতীয় জেনারেল ঢাকা বিমানবন্দরে যান ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকবকে আনতে। কোলকাতার সদর দফতর থেকে তিনি হেলিকপ্টারে করে আসবেন। বিমান বন্দরে জেনারেলের সাথে মাত্র তিনজন সৈন্য ছিল। রানওয়ের আরেক প্রান্তে বিমান বন্দর প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনা ইউনিট আত্মসমর্পণ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য এক স্থানে জড়ো হচ্ছিল। বিমান বন্দরে নাগরাকে এক সাংবাদিক বললেন, ‘দেশের বাড়ি গিয়ে বড়দিন উদযাপন করতে চাই। সেটি নির্ভর করছে আপনার উপর। ‘জেনারেল বললেন, ‘আমরা সেটা করছি।’ এসময় জ্যাকব বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এখন সবকিছু শান্ত হয়ে এসেছে। আমরা সৈন্য ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিরাপত্তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছি এবং আমরা তা করবো।’

‘লন্ডন টাইমস’ ১৬ ডিসেম্বর ডেটলাইনে ‘পাকিস্তানি জেনারেল উদগত কান্না চাপছিলেন’ শিরনানমে সাংবাদিক পিটার ও লাওলিন লিখেন ‘পশ্চাত থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল। অস্তগামী সূর্যের আলোয় ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাতা টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়েছিল এক দঙ্গল মানুষ। লেফটেন্যেন্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছিলেন। শত শত বাঙালি জয় বাংলা ধ্বনিতে ফেটে পড়ে। ভারতীয় সৈন্যরা বেস্টনী রচনা করে তাদের দূরে সরিয়ে রাখে। স্বাক্ষর শেষে জেনারেল নিয়াজি উঠে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে উল্লাসিত বাংলাদেশের জনগণ চিৎকার করতে থাকে। তিনি উদগত কান্না চাপার চেষ্টা করছিলেনে। পাগড়িধারী ভারতীয় শিখ সেনানায়ক লেফটেন্যন্ট জেনারেল জে এস অরোরাকে সৈন্যরা কাঁধে তুলে ফেললো। সন্ধ্যা নেমে এসেছে ততক্ষণে।

পিটার ও লাওলিন লিখেন, ‘উপস্থিত জনতা সৈন্যদের প্রতি ফুলের মালা আর লাল ফুলের গুচ্ছ ছুড়েঁ মারে। ভারতীয় সৈন্যবাহী বাসগুলোর ছাদে উঠে আনন্দে মাতোয়ারা বাঙ্গালিরা নাচতে থাকে। তৃষ্ণার্ত সৈন্যদের জন্য বাড়ি থেকে পানি ভর্তি কলস বয়ে আনে।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন ভারতীয় অফিসার-লেফটেন্যান্ট কর্নেল বিপি রাইখ জানালেন, দলিলে সই হয়ে যাওয়ার পরই পাকিস্তান ও ভারতীয় সৈন্যদের মুখোমুখি করা হয়। তিনি বললেন, দলিলে সই করার পর অরোরা নিয়াজির কাঁধের তকমা খুলে ফেলেন। এটাই রীতি। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের হাতের অস্ত্র মাটিতে রেখে দেয়। অরোরাকে জনতা কাঁধে তুলে নেয়। প্রতিটি ভারতীয় অফিসারকে ঘেরাও করে ফেলে জনতা এবং তাদের উপর ফুল ছুড়তে থাকে। পিটার ও লাওলিনের রিপোর্ট বাংলাদেশ ডকুমেন্টস-এ এর উল্লেখ আছে।

একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর নিউইর্য়ক টাইমসের প্রথম পাতায় মোট ১৪টি সংবাদ ছাপা হয়েছিল। প্রধান খবরটি ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সর্ম্পকিত। আট কলমে দুই লাইনে সেই খবরের শিরোনাম ছিল, ‘পূর্বাঞ্চলে আত্মসমর্পণের পর উভয় ফ্রন্টে যুদ্ধ বিরতিতে ভারতের নির্দেশ।’ অন্যদিকে ১৪টি খবরের মধ্যে আটটি ছিল উপমহাদেশের যুদ্ধ সংক্রান্ত এবং সবগুলোরই ডেটলাইন ১৬ ডিসেম্বর। ঢাকায় আত্মসমর্পণের উপর রিপোর্ট ছিল দুটি। একটি জেমস পি স্টিরার এবং অপরটি সিডনি এইচ স্যানবার্গের।

সাংবাদিক জেমস পি স্টিরার ‘উল্লাস আর পুষ্প উৎসব’ শিরোনামে প্রতিবেদনে লিখেন, ‘পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণের চরমপত্র গ্রহণের পরপরেই আজ (১৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে এবং ‘জয়বাংলা, শ্লোগানে উচ্চকিত ভারতীয় সৈন্যরা ট্রাক আর বাসে করে শহরের উত্তর দিক থেকে পাকিস্তানি সামরিক ছাউনিতে প্রবেশ করে।

তিনি লিখেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় সন্যদের সাথে ছিল। সৈন্যদের অধিকাংশই ছিল পরিশ্রান্ত ও ক্লান্ত। চোখে অবসাদ। গাড়ির উপর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এখনো তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। বাঙালিরা প্রতিটি গাড়ি ঘিরে ধরে এবং জয়বাংলা ও শেখ মুজিব শ্লোগানে উচ্চকণ্ঠ হয়ে উঠে।’

এসময় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য ও বিহারী মুসলমান, যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে, তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য জনতা এগিয়ে গেলে বিদ্রোহীদের এক নেতা তাদের ঠেকিয়ে দেয় এবং বলে ‘ওরা এখন আমাদের বন্দি। আমরা তাদের মতো নই। অবশ্যই আমাদের সভ্য হতে হবে’ , লিখেন জেমস পি স্টিরার।

লন্ডনের ‘ডেইলি মেইল’ পত্রিকাতেই প্রায় একই রকম একটি প্রতিবেদন ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ডেট লাইনে ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি করেন সাংবাদিক ডেনিস নিল্ড। তিনি লিখেন ‘গতকালের (১৬ ডিসেম্বর) দিনটি ঢাকার অধিবাসীদের জন্য মুক্তির দিনে পরিণত হয়। তারা কাঁদে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। ভারতীয় সৈন্যদের দিকে ফুল ছুড়ে মারে। হারিয়ে যাওয়া ভাইকে ফিরে পাওয়ার মতো আবেগে তাদের হাত জড়িয়ে ধরে। বৃদ্ধরা রাস্তায় নেমে এসে তরুণদের মতো নাচতে থাকে। সারা শহর স্বাধীনতার শ্লোগান জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। শহরে গোলমাল ছিল। ছিল বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তির। রক্তপাতও ঘটে।’

সূত্র : বাসস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com