পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর ২০১৬ সালে আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখেন। কিন্তু এরপরই পটপরিবর্তন হতে শুরু করে। রাজ্যে বিজেপির পাল্লা ভারি হতে শুরু করে। একই সঙ্গে দফায় দফায় তৃণমূলে ভাঙন দেখা দেয়।
আসছে নতুন বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগে বেশ কিছুদিন থেকেই রাজ্যে বইছে নির্বাচনের হাওয়া। রাজনীতির মাঠ সরগরম। কিন্তু মমতার সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে বিজেপি। রাজ্যে বিজেপি প্রথম বীজ বপন করে ২০১৪ সালে। ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি বিপুল জয় পেলেও মমতার পশ্চিমবঙ্গে মাত্র দুই আসন পেয়েছিল। সেই দুই আসনই পর্যবেক্ষকরা মমতার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখেছিল। এরপর কেটে গেছে আরও সাত বছর। সেই সময়ের বিজেপির বীজ আজ রীতিমতো বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। গত বছর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি দখল করে নেয় ১৮টি।
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুল রায়। যার হাত ধরে দলটি অনেক কঠিন সময় পার করেছে। সেই মুকুল রায় মমতার সঙ্গে কলহের জেরে ২০১৭ দল ছেড়ে দেন। তিনি এখন রাজ্যে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলের সেই ভাঙন মুকুলেই থেমে নেই। এরপর যারাই তৃণমূল ছেড়েছেন প্রায় সবাই নৌকা ভিড়িয়েছেন বিজেপির নোঙরে। সর্বশেষ তৃণমূল সরকারের সাবেক মন্ত্রী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও জিতেন্দ্র তিওয়ারি দল ছেড়েছেন। শুভেন্দু যেনতেন নেতা নন। তৃণমূলের ভেতরে মমতার পরই প্রভাবশালী নেতা হিসেবে শুভেন্দুকে বিবেচনা করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৫০টি আসনে সরাসরি প্রভাব রয়েছে শুভেন্দুর হাতে। জোর গুঞ্জন রয়েছে, সেই শুভেন্দুও যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। আজ ১৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার কথা। অমিতের হাত থেকেই অভিনন্দনের ফুল নিতে পারেন শুভেন্দু। শুভেন্দু দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন গত বুধবার। আর তিওয়ারি দল ছেড়েছেন তার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। এ দুজনই বিজেপিতে যোগ দেওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যদিও তৃণমূল নেত্রী মমতা গত বুধবার বলেছেন, এখান থেকে দু-একজন চলে গেলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির শীর্ষনেতা কৈলাশ বিজয়বর্গিয়া বলেছেন, শুভেন্দুর নেতৃত্বগুণ বহুমুখী। তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব। একদিকে তৃণমূলের ঘর ভাঙছে, অন্যদিকে বিজেপি গড়ছে। গোটা ভারতের রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যায় বিজেপির ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৪ সালে মোদি ঢেউয়ের জোয়ার তুলে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু গত বছর তার চেয়েও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় বসেন মোদি। অর্থাৎ বিজেপি কোনো দিক থেকেই ম্লান হয়নি। কাশ্মীর, নাগরিকত্ব আইনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেও দলটির জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি বিহারে বিধানসভা নির্বাচনেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই রাজ্যে বিজেপি রেকর্ডসংখ্যক ৭৩ আসনে জয়ী হয়েছে। এরপর বিজেপির টার্গেট হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকারের পতন। সেই লক্ষ্য নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। যার দায় পড়ে মমতা প্রশাসনের ওপর। এর জের ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ তিন আইপিএস অফিসারকে বদলি করা হয়। এতে চটেছেন মমতা। খবর বেরিয়েছে, এ ঘটনাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে আদালতে মামলা ঠুকবেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হবে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নিবন্ধন নীতিমালা। এ দুই ইস্যুকে কাজে লাগাতে চান মমতা। তবে শুধু ইস্যুর ধোঁয়া তুলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া মমতার জন্য কঠিন হবে। সবচেয়ে কঠিন হবে, নিজের ঘর সামলাবেন নাকি বিজেপিকে ঠেকাবেন।
Leave a Reply