নাজিরপুর প্রতিবেদক ॥ পাখির কিচিরমিচির কলতানে এক সময় গ্রাম বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙতো। দেশের গ্রাম বাংলায় শ্যামল প্রকৃতিতে হরেকরকম পাখির উপস্থিতি আরও মনোরম করে তুলতো গ্রাম বাংলাকে। স্থায়ী বসবাসকারী পাখি আর শীত মৌসুমের শুরুতেই এর সাথে যোগ হয় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখি। এদের মধ্যে যে পাখির নাম আমরা সর্বাধিক শুনেছি এবং দেখেছি গ্রাম বাংলায় অবাধ বিচরণ করতে। তাদের মধ্যে দোয়েল, কয়েল, ময়না, শ্যামা, টিয়া, মাছরাঙা, শালিক, কোকিল, পেচাঁ, চড়ুই, ঘুঘু, পাপিয়া, ডাহুক, চিলা, ঈগল, পানকৌড়ি, ময়ুর, সারাস, কাঠঠোকরা, বুলবুলি, চাতক, বাবুই, বক, বউকথাকও, হলুদিয়া, কনা, টুনটুনি, ফিঙে, পায়রাসহ নানা প্রজাতির পাখি। বর্তমানে অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে যাচ্ছে নানাবিধ কারণে। এরমধ্যে মানুষের সৃষ্ট কারণসমূহই প্রধান। জলবায়ুর পরির্বতনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনাঞ্চল। পাখিরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। নদীপৃষ্ঠের লবনাক্ততা ও কীটনাশকের প্রভাব বেরে যাওয়ায় পাখির খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নদী অঞ্চলে লবনাক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। অধিক ফলনের আশায় কৃষক জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে পরিবেশগত বির্পযয়ের ফলে পাখি তার প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে অপরদিকে বহু প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। মানিকজোর, সবুজ ঘুঘু, হারগিলা, শঙ্খচিল, ভূবনচিল, মদনটাক, ময়ূর, ঈগল, শকুন,বক, বাদুর বিলুপ্তির পথে রয়েছে। এ দেশে শকুনের যেকটি প্রজাতি আছে তার মধ্যে বাংলা শকুন হারিয়ে গেছে। শকুনের খাবার আবাসস্থল নেই। যার ফলে বাংলা শকুন হারিয়ে যাচ্ছে। শকুনরা সাধারনত বড় বড় গাছে বাসা বাধে এবং ডিম পারে। পুরোনো বড় বড় গাছ নিধন করে ফেলায় পরিবেশের বন্ধু শকুন হারিয়ে গেছে। দেশে ৪৩ প্রজাতির চিল, বাজ, ঈগল, ও শকুন পাখি দেখা যেত। এরা খাবার হিসাবে ইদুর, মাছ ব্যাঙ, ছোট সাপ, পোকামাকড় পছন্দ করে। নদী-নালা ও জলাশয়েল পাশের বড় গাছে বসবাস করত এরা। নদী-নালা ও জলাশয়ের দূষণের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে রূপসী বাংলার কবি। জিবনান্দ দাসের শঙ্খ চিল।
এ উপজেলায় যত ধরনের ঘুঘু দেখা যায় তার মধ্যে সবুজ ঘুঘু সবচেয়ে সুন্দর, ছায়াঘেরা বনের নির্জনে খুব সকালে ও শেষ বিকালে এরা খাবার খুঁজে বেড়াত যা দেখতে খুব ভাল লাগত বাকী সময়ে বৃক্ষের ডালে বসে সময় কাটাত জলবায়ু দ্রুত পরির্বতনে এখন ঘুঘু বিচরণ চোখে পড়েনা। শীত মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে ঘুঘু দেখা গেলেও সবুজ ঘুঘুর দেখা মেলেনা যাও দেখা যায় তাও শিকারিদের কারনে মারা পড়েছে প্রতিদিন। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে বাংলাদেশে পাখি শিকার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ হলেও প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করে কিছু অসাধু ব্যক্তি পাখি শিকার করেও পাখি খাচায় বন্দি করে ব্যবসা করে যাচ্ছে।’
Leave a Reply