স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রকাশ্যে প্রচারণায় পিছিয়ে ছিল। কিন্তু কর্মীরা নীরবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিল। সেই নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী নীরবে প্রচার চালিয়েছিলেন। নীরব প্রচারণাই বিএনপিকে জয়ের পথ দেখিয়েছিল। বিএনপির সেই মজিবর রহমান সরোয়ার এবারও দলের মেয়র পদপ্রার্থী। এবারও তিনি ‘নীরব’ নির্বাচনী প্রচার কৌশল নির্ধারণ করেছেন। অন্যদিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে সরব নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বিএনপির ‘নীরব’ কৌশল : বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার দলীয় কার্যালয় থেকে গত মঙ্গলবার প্রতিক বরাদ্ধের পরপরই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। সেখানে মেয়র মনোনয়ন প্রত্যাশী বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান, জেলা দক্ষিণ বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা আফরোজা খানম নাসরিনও ছিলেন। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী একেএম মাহাবুবুর রহমান (মেয়র প্রার্থী) ওই প্রচারণায় অংশ নেন। তবে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিলকিস জাহান শিরিন ঐদিন প্রচারণায় ছিলেন না। ছিল না জামায়াতের শীর্ষপর্যায়ের কোনো নেতাকর্মীও। ভোটের মাঠে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশ নেওয়া সরোয়ার ও তার পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা ‘নীরবে’ প্রচারণা শুরু করেছেন। বরিশাল বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধীক সুত্র জানায়, আ’লীগের অনেকেই ভাবেন এ নির্বাচনে বিএনপির একাধীক প্রার্থী থাকায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো বরিশাল বিএনপি ঐক্যবদ্ধ অতীতেও ছিলো এখনও আছে, সামনেও থাকবে। সুত্র আরও জানায়, সাধারন ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারলে আগামী ৩০ জুলাই বিসিসি নির্বাচনে নিরব বিপ্লব ঘটবে, আর এমনটা ভেবেই বরিশাল আ’লীগ বিএনপির ঐক্য নিয়ে নগরবাসীর মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তারা প্রশাসন আর ক্ষমতাসীনদের ভয়ে আছে। সেই কারণে নেতাকর্মীরা যে যার অবস্থান থেকে প্রচারণায় অংশ নেবে। মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘এই নগরের ভোটার ও এখানকার মানুষ আমাকে সব সময় তাঁদের সঙ্গেই রেখেছেন। বরিশাল সদর আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য ও নগরবাসী আমাকে একবার মেয়র নির্বাচিত করেছে। তাই তাঁদের কাছে আমাকে যেতে হবে। আমি প্রার্থী, ভোটাররা প্রার্থীকেই পাশে চান।’ তিনি নগরবাসীর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বলেন, ইতোপূর্বে নগরবাসী আমাকে যেভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন, ঠিক তেমনি আগামী ৩০ জুলাইও নগরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন।
সরব নৌকার প্রচারণা : আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পেয়েই ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। দলীয় ও বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়ে গিয়ে মতবিনিময় করছেন। নিজেকে বিজয়ী করতে ও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করতে তাদের কাছে ছুটছেন। তাঁর পক্ষে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রভাবশালী নেতারা প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মহানগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকা প্রতীকের পক্ষে শুরু হয় প্রচারণা। এর বাইরে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একযোগে তার পক্ষে প্রচারণা শুরু করে নেতাকর্মীরা। প্রচারণায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। সাদিক গতকাল বুধবার থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন নগরীর তিনটি ওয়ার্ডে তিনটি করে উঠান বৈঠক করবেন। এছাড়া মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নগরীর কাকলীর মোড় থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন হাত পাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহাবুব। এর বাইরে বাসদ প্রার্থী ডা. মণীষা চক্রবর্তী তাঁর দলীয় প্রতীক মইয়ের পক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে ফকিরবাড়ী রোডস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে প্রচারণা শুরু করেন। একইভাবে সিপিপি প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ তাঁর কাস্তে প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালান। সবমিলিয়ে বিসিসি নির্বাচনে সব মেয়র প্রার্থীরাই ড়তকাল বুধবার দিনভর গণসংযোগ ও সভসমাবেশে ব্যস্ত সময় পাড় করেছেন। একইভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই।
Leave a Reply