জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি- সবই যেন শ্লথ হয়ে গিয়েছিল এ বছরটিতে। করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব। এর মধ্যেও এই বছর সম্ভাবনা দেখিয়েছি বেশ কিছু প্রযুক্তি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
কোয়ান্টাম কম্পিউটার : কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার। বর্তমানে আমরা যে সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করি, এটি এর চেয়ে অনেকগুণ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার। আমরা এখন যে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করি, এর তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ডেটা প্রক্রিয়া করার ব্যবস্থাটি ভিন্ন। বর্তমান সুপারকম্পিউটারগুলো যে সমস্যার সমাধান করতে কয়েক হাজার বছর সময় ব্যয় করে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তা নিমেষেই সমাধান করতে পারবে। ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন পরমাণু নিয়ে প্রথম গবেষণা চালানো হয়, তখন থেকে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান লজিক বা যুক্তি অস্বীকার করেছে। কোয়ান্টামের জগতে পরমাণু প্রচলিত পদার্থবিদ্যার সূত্র মানে না। কোয়ান্টাম কণা একই সময়ে সামনে বা পেছনে যেতে ও দুই জায়গায় অবস্থান করতে পারে। অর্থাৎ একটি কোয়ান্টাম কণা একই সঙ্গে তার সব রকম অবস্থায় থাকতে পারে। এই অদ্ভুতুড়ে আচরণের কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সুবিধা নেওয়ার কথা ভাবেন গবেষকরা। গত বছরের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো গুগল এ রকম একটি কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি প্রদর্শন করে। এ বছরও এই প্রযুক্তিটি বেশ সম্ভাবনা দেখিয়েছে। ৫৩ কিউবিটের একটি কম্পিউটার তিন মিনিটের কিছু বেশি সময় ধরে একটি হিসাব করেছে- যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুপারকম্পিউটারের দশ হাজার বছর সময় লাগত। এটি একটি মাইলফলক। নতুন একটি কিউবিট সংযোজন কম্পিউটারটিকে দ্বিগুণ গতি দেবে। গুগলের এই অর্জন অবশ্য শুধু একটি ধারণার বাস্তবসম্মত প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আনহ্যাকেবল কোয়ান্টাম ইন্টারনেট : বিশ্বব্যাপী যে ইন্টারনেটব্যবস্থা চালু রয়েছে, এখন পর্যন্ত তা শতভাগ নিরাপদ নয়। ফলে তথ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার চলেই আসছে। আর এই অনিরাপদ ইন্টারনেট তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। ইন্টারনেটে ডেটার নিরাপত্তা ধীরে ধীরে কমছে। এ জন্য গবেষকরা ভিন্ন ধরনের একটি ইন্টারনেটব্যবস্থার কথা ভাবছেন। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে এমন এক ইন্টারনেটব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব- যেখানে হ্যাক করা অসাধ্য হয়ে উঠবে। কয়েক বছর ধরে গবেষকরা ফাইবার অপটিকের মধ্য দিয়ে ফোটনকে জোড়ায় জোড়ায় কীভাবে পাঠানো যায়, তা নিয়ে ভাবছিলেন- যাতে তাদের মধ্যে এনকোড করা তথ্যটি সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ থাকে। জানা গেছে, স্টেফানি ওয়েনারের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন- যেটি সম্পূর্ণভাবেই কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। চীনের গবেষকরাও এ ধরনের একটি প্রযুক্তি নিয়ে আগেই কাজ করেছেন। নেদারল্যান্ডসের নেটওয়ার্কটি পৃথিবীর প্রথম নেটওয়ার্ক হতে যাচ্ছে, যেটি সম্পূর্ণভাবে কোয়ান্টাম কৌশল অনুসরণ করে কয়েকটি শহরকে সংযুক্ত করবে। বিশেষ এ প্রযুক্তিটি ‘এনটেঙ্গলমেন্ট’ নামে পারমাণবিক কণাগুলোর একটি বিশেষ আচরণের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠছে। সমস্যা হচ্ছে, এনটেঙ্গলড আচরণ করে- এই ধরনের কণা তৈরি করা একটি জটিল কাজ। এই কণাগুলো লম্বা দূরত্বে পাঠানো আরও কঠিন। দুটি ফোটন কণা যদি এনটেঙ্গলড অবস্থায় রাখা হয়, তা হলে এগুলোর মধ্যে এনকোড করা তথ্য নষ্ট না করে সেটি গোপনে পড়া সম্ভব নয়।
বার্ধক্য প্রতিরোধী সেনোলাইটিকস ওষুধ : বার্ধক্যজনিত রোগে বিশ্বে বহু মানুষ মারা যায়। কিন্তু এবার বার্ধক্য প্রতিরোধী একটি নতুন ধরনের ওষুধ মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। বার্ধক্য প্রতিরোধে এটিই প্রথম কোনো উদ্ভাবন বলে মনে করছেন গবেষকরা। এই ওষুধ অবশ্য কারও আয়ু বাড়িয়ে দেবে না। কিন্তু বার্ধক্যজনিত রোগগুলো নিরাময়ে সাহায্য করবে। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেনোলাইটিকস’। মানবদেহ যখন ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকে, তখন তার দেহে ‘সেনেসেন্ট’ নামক এক ধরনের কোষ বৃদ্ধি পায়। এ কোষগুলোই মূলত বার্ধক্যের জন্য দায়ী। এই কোষগুলো তার আশপাশ কোষের সাধারণ মেরামত ব্যবস্থা নষ্ট করতে থাকে। একই সঙ্গে একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করে। সেনোলাইটিকস এই ধরনের কোষগুলো মেরে ফেলে।
Leave a Reply