একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি আজ বুধবার। দিনটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ এবং মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে আজ রাজপথে থাকছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন (সিপিবি) বাম গণতান্ত্রিক জোটও সরকার পতনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই ভোটের বর্ষপূর্তির দিনটি দেশে কিছুটা হলেও রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষিত কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথভাবে পালনের জন্য সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র সুসংহত হয়। গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার এ ধারাকে আমরা জণগণ ও গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবেই মনে করি। তাই দিনটিকে আমরা ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করব।
দিনটি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশে নানা আয়োজনে উদযাপন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আলোচনাসভা করবে। বেলা ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভা করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন জানান, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ করে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উদযাপনে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লার নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ র্যালি করবে ছাত্রলীগ। শোভাযাত্রা করবে কৃষক লীগ। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী এবং সমমনা সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শৃঙ্খলার সঙ্গে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করব। কোনো দল যদি এ অনুষ্ঠান ব্যাহত করার চেষ্টা করে তা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
অন্যদিকে এ দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবে বিএনপি। ওই নির্বাচন বাতিল ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে হবে সমাবেশ। দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরেও কর্মসূচি পালিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর ‘ভোটডাকাতি’ হয়েছে। তাই ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে দেশবাসী ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে অভাবনীয় রেকর্ড সৃষ্টিকারী রাতে র্যাব-পুলিশের সহায়তায় ব্যালটবাক্স পূর্ণ করে ক্ষমতাদখলের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে মঙ্গলবার রাতে। তাই ওই রাত দেশবাসীর কাছে তাদের ভোটাধিকার হরণের কালরাত হিসেবে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। সেদিন গণতন্ত্রের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়েছিল। নির্বাচনে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেররা যা করেছেন তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে ‘ডার্টি ওয়ার’।
রিজভী বলেন, ওই ভোটের কেন্দ্রভিত্তিক ফল বিশ্লেষণেও প্রমাণিত হয়েছে, নির্বাচনের প্রকাশিত ফল ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। নির্বাচন কমিশন যে ফল প্রকাশ করেছে, তাতেই জানা গেছে- ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত নয়। এ ছাড়া ৫৯০ কেন্দ্রে বৈধ ভোটের শতভাগ কেবল একটি প্রতীকেই পড়েছে। এটিও অবিশ্বাস্য। এসব অবাস্তব ও অস্বাভাবিক ঘটনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কোনো ব্যাখ্যা নেই।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের পর টিআইবি পরিচালিত এক জরিপেও আগের রাতে সিল মেরে বাক্স ভরার অভিযোগ উঠে আসে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিত ৫০ আসনের মধ্যে ৩৩টিতেই আগের রাতে সিল মেরে রাখার ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে টিআইবি।
দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের সাম্প্রতিক বিবৃতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করে ইসির ভোটডাকাতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার করার জন্য দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা যে দাবি জানিয়েছেন, এর পাশাপাশি ভোটডাকাতির নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেই আওয়ামী সরকারের এ মুহূর্তে পদত্যাগ দাবি করছি।
বাম গণতান্ত্রিক জোট আজ রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল করাসহ সারাদেশে জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন ৩০ ডিসেম্বরের ‘ভোটডাকাতির’ নির্বাচনের আয়োজক নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a Reply